সোসাইটি অফ স্পিচ এ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টস (এসএসএলটি) বাংলাদেশে স্পিচ এ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট পেশাজীবীদের একমাত্র সরকার স্বীকৃত পেশাজীবী সংগঠন। সংস্থাটি নহর ইনিশিয়েটিভস এর সাথে যৌথ উদ্যোগে ১৭ জুন শুক্রবার, রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা ভবনের কনফারেন্স রুমে বিশিষ্ট ব্যাক্তি বর্গকে নিয়ে একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাইদুর রহমান। অতিথি হিসেবে আরোছিলেন জনাব কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ।
আলোচনায় শুরুতেই ২ জন সেবাগ্রহীতা তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসা প্রাপ্তির সুফল তুলে ধরেন।
সূচনা বক্তব্যে, সিআরপি এর স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনাব তাহমিনা সুলতানা বলেন, স্পিচ এ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র পেশা। যার মাধ্যমে একজন স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট ব্যাক্তির কথা, ভাষা, যোগাযোগ, সামাজিক দক্ষতা এবং খাবার গলধঃকরণ সংক্রান্ত সমস্যা নির্ণয় এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করেন।
আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট জনাব মোঃ কাওছার বলেন “বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮” এর প্রথম তফসিল অনুযায়ী, যে ব্যক্তি সরকার স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব সাইন্স ইন স্পিচ এ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, উল্লেখ্য ন্যূনতম ১ (এক) বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপসহ স্নাতক প্রোগ্রামটি সম্পন্ন করছেন তিনিই শুধুমাত্র স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করতে পারবেন এবং ‘স্পিচ থেরাপিস্ট/স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট’ পদবী ব্যবহার করতে পারবেন। তাই প্র্যাক্টিসের নিমিত্তে তাঁদেরকে দ্রুত লাইসেন্স প্রদান করে আইনের বাস্তবায়ন হওয়া সময়ের দাবী। প্রয়োজনে আলাদা মনিটরিং সেল চালু করে ভুয়া ও কোয়াক প্র্যাক্টিশনারদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সোসাইটি অব স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টস এর সভাপতি জনাব ফিদা আল – শামস বলেন, “অভিন্ন চিকিৎসা অনুষদ, কোর্স টাইটেল, শিক্ষা কাঠামো এবং কারিকুলাম, শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা ও ১ বছর ইন্টার্ণশীপসহ পাঁচ বছর মেয়াদী কোর্স নিশ্চিত সাপেক্ষেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোর্স চালানোর অনুমতি প্রদান করতে হবে। এরকম করা না হলে রোগীর জীবন ঝুঁকিতে পড়বে এবং সর্বসাধারণের সাথে প্রতারনা চলতেই থাকবে”। তিনি আরো বলেন “বর্তমান সরকার অত্যন্ত প্রতিবন্ধিবান্ধব। এই সরকারের আমলেই এ সংক্রান্ত অনেকগুলো আইন, নীতিমালা ও বিধি তৈরী হয়েছে। এগুলোর বাস্তবায়নে সরকারকে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগীতা করা জরুরী”।
একজন বিশেষ শিশুর অভিভাবক ও বেসরকারি সংস্থা গোল্ডেন কিডস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ শাহাদাত কবীর, সেবাপ্রাপ্তিতে তাঁর ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলেন যে, “এটা লক্ষ্যনীয় যে অনেক নিয়োগ কারী সংস্থা সঠিক নিয়ম কানুন মেনে আইন অনুযায়ী যোগ্যতাসম্পন্ন থেরাপিস্ট নিয়োগ দিচ্ছেনা। যা সেবাগ্রহীতাদের সাথে একধরণের প্রতারণা। এই অতীব প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবাটি নিশ্চিত করতে হলে শুধুমাত্র বিশেষ স্কুল নয় বরং বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারী ও বিশেষায়িত হাসপাতালসহ সর্বত্র স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগ চালু করে অবশ্যই স্থায়ী রাজস্ব খাতে সকল স্পিচ থেরাপিস্টকে নিয়োগ করতে হবে এবং তার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রধান অতিথি ও সম্মানিত অতিথিবৃন্দের বক্তব্যে আলোচ্য বিষয়গুলিতে নজরদারি বাড়ানোর জন্যে কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি এবং বিভিন্ন শাখা কমিটিসমূহে এসএসএলটি মনোনীত স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার কথা জোর দিয়ে বলা হয়। গোলটেবিল আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ডাঃ সাকী খন্দকার প্রমূখ। স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি শিক্ষা, চিকিৎসা ও পেশা হিসেবে এর ব্যপ্তিকে মূল উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন সি আরপি এর রিসার্চ ও ইভালুয়েশন অফিসার ও স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট জনাব শায়খুল হাসান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নহর ইনিশিয়েটিভসের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার (সিসিও) শাহেদ সেলিম।
এছাড়াও একইদিন সকালে ধানমন্ডি লেকে জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন ‘চলো একসাথে হাঁটি’ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি শিক্ষা, চিকিৎসা ও পেশা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করা হয়।
এতে সাভার সিআরপির বি এইচ পি আই এর স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগের ছাত্র/ছাত্রীবৃন্দ ও বেশ কয়েকজন উদীয়মান স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট অংশগ্রহণ করেন। এই ক্যাম্পেইনে অংশ গ্রহণ করে নহর ইনিশিয়েটিভস এর ফাউন্ডার ও সিইও ফারিদ খান এবং নহর ইনিশিয়েটিভস এর হেড অফ ক্রিয়েটিভ সাহেল সুমন ভবিষ্যতেও এসএসএলটির সাথে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ও বিভিন্ন কার্যক্রমে একসাথে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।