পবিত্র রমজান মাসে ইদ সামনে রেখে সবার নানা ধরনের পরিকল্পনা, স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। পরিবারের হাজারো স্বপ্নের অনেকটাই আমরা এ দুই ইদে পূরণ করে থাকি। ঠিক এমনি ইচ্ছে নিয়েই বাঁচেন চাকুরিজীবী, বাঁচেন ব্যবসায়ীরাও। আর এ জন্যই বাজারচাহিদার ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ীরা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অধিক পরিমাণ পণ্য সংরক্ষণ করেন বিক্রি করার জন্য।
সম্প্রতি ঢাকার বিখ্যাত কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজারে আগুন লাগার সংবাদটি হাজারো স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়েছে। চোখের সামনে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ অর্থের কাপড় পুড়ে যায়। এ মাসের ৫ তারিখে ঢাকার আকাশে হাজারো স্বপ্ন ভয়ানক কালো ধোঁয়া হয়ে উড়ে যেতে দেখেছে দেশবাসী। ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো গতকাল। একই সময়ে একই রকমভাবে আগুন লাগার সংবাদ আসে নিউ মার্কেট অঞ্চলের একটি কাপড়ের মার্কেট থেকে। বঙ্গবাজার ব্যবসায়ীদের মতো নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের আহাজারির চিত্রও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়। সর্বস্ব হারিয়ে ব্যবসায়ীদের যেভাবে আহাজারি করতে দেখা যাচ্ছে, তাতে কোনো সান্ত্বনাই যথেষ্ট নয়। স্বল্প পুঁজির এসব ব্যবসায়ীর প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া সাধারণ মানুষের কী-ই বা করার আছে?
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের মলিন কান্নার ছবি কিংবা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটার পর। এসব পোস্ট শেয়ার করার মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়ীদের প্রতি শোক, আবেগ প্রকাশ করি। এ দুটি ঘটনা বিভিন্ন আবর্তে ঘূর্ণায়মান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র সমাজের সেলিব্রিটিদের দেওয়া অর্থ সাহায্য সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রধান হেডলাইন হয় এ সময়। সর্বোপরি আমরা বিভিন্ন দুর্যোগে বিপদাপন্ন ব্যক্তির পাশে দাড়াই, যা আমাদের বাঙালি জাতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
এখন প্রশ্ন হলো, কী জন্য এত ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড? এর উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে, সাম্প্রতিক সময়ে যে অগ্নিকাণ্ডগুলো সংঘটিত হচ্ছে, তার জন্য মূলত অপরিকল্পিত মার্কেট নির্মাণ, দোকানগুলোতে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় অনিয়ম, বহুদিনের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সঠিক মেরামত না করাসহ আরো অনেক কারণই দায়ী। আর আগুন নেভাতে বিলম্ব হওয়ার পেছনে সবচয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সরু রাস্তা আর রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন হকার্স মার্কেট।
তাছাড়া সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করে ভবন নির্মাণ করা; ভবনের সামনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা না রাখা; ভবনের ভেতরে প্রয়োজনের অধিক দোকান বরাদ্দ দেওয়া; ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র না রাখা বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও আগুন নেভানোর কৌশলের প্রতি জনসাধারণের অজ্ঞতা। এ সবই আগুন লাগার উল্লেখযোগ্য কারণ। এখানে যেমন জনসাধারণের দায়বদ্ধতা রয়েছে, তেমনি দায়বদ্ধতা রয়েছে দেশের প্রশাসনেরও। কেননা, সঠিকভাবে প্রতিনিয়ত বাজার তদারক করা হলে অনেক সমস্যাই হয়তো সমাধান করা সম্ভব। পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতেও প্রশাসনকে এগিয়ে আসত হবে। সবার সম্মিলিত প্রয়াস না থাকলে আগুন জ্বলবেই। আর স্বপ্নগুলো পুড়ে কালো হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যাবে!