আমার স্বপ্ন যদি সত্যি হতো। আমার স্বপ্ন খুব বেশি বড় নয়। আমার চাওয়া পাওয়া খুবই সামান্য। আমার বিশ্বাস এই স্বপ্ন একদিন সত্যি হবেই। ছোট বেলায় বয়স্কদের কাছে শুনেছি। ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। সেই দিন ভোরবেলায় স্বপ্ন দেখেছি, দেশটা স্বপ্নের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশের সব মানুষের জীবন ও জীবীকা নিশ্চিত হয়েছে। আইনের শাসন নিশ্চিত হয়েছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, সংঘাত-সহিংসতা ভুলে সবার মধ্যে সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতি গড়ে উঠেছে। মানুষের মধ্যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য লোপ পেয়েছে। ঋণ খেলাপীরা তাদের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছে, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছে। সমস্ত ভেঁজাল পণ্য নদীতে ফেলে দিয়েছে। যারা ব্যাক লুট করেছে বিদেশে টাকাপাচার করেছে তারা সবাই যার যার অবস্থান থেকে সবকিছু ফিরিয়ে দিয়েছে। দেশের শিক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত দেশের পর্যায়ে চলে গেছে। সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং শিক্ষকরা তাদের কাজের প্রতি শতভাগ দায়িত্বশীল ও যত্নশীল হয়েছেন।
দেশের কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন, শ্রমিকরা পরিশ্রমের উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। পরিবেশ দূষণ কমে গেছে, সবুজায়ন বেড়েছে নদী-নালা-খাল-বিল আগের রূপ ফিরে পেয়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধ হয়েছে, নদী, বন, পাহাড় তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেয়েছে। সবুজ প্রকৃতিতে মানুষ শ্বাস নিচ্ছে মুক্ত বাতাসে। কেউ আর বেকার নেই, সবাই কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিল্পের বিকাশে দেশ বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে। পরিবেশ দূষণ কমে গেছে, নদী-নালা, বন-জঙ্গল সব আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শহর ও গ্রাম সব জায়গায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সমান বণ্টন হয়েছে। যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে উঠেছে। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বেড়েছে, কেউ কারো প্রতি বিদ্বেষ, হিংসা পোষণ করে না। রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার লোভ ভুলে গিয়ে জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। পরিবেশ দূষণ কমে গেছে, সবুজায়ন বেড়েছে নদী-নালা-খাল-বিল আগের রূপ ফিরে পেয়েছে।
শিক্ষার্থীরা শুধু ডিগ্রির পেছনে না ছুটে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে মনোযোগী হচ্ছে। গবেষণা ও উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার জন্য মুখস্থ পড়ছে না, বরং সৃজনশীল চিন্তা, গবেষণা এবং নতুন আবিষ্কারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। শিক্ষার মান এতটাই উন্নত হয়েছে যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছে শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে গৌরব ছড়াচ্ছে। আমাদের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য এনে দিচ্ছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য দূর হয়েছে। শহরের সব সুবিধা এখন গ্রামেও পৌঁছে গেছে। উন্নত রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সব কিছু গ্রামের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে গেছে। তরুণরা মাদক, বেকারত্ব ও হতাশার শিকার নয়: তারা নতুন নতুন উদ্ভাবন ও উদ্যোগ নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও গবেষণায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যায় ও দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীনিরপেক্ষ ও সৎভাবে কাজ করছে, অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তার শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা শুধু সনদ অর্জনের জন্য নয়, প্রকৃত জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়েছে। গবেষণা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে দেশ বিশ্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। নারী ও পুরুষ সমান সুযোগ পাচ্ছে নারীরা কর্মক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরাপদ। শিশুরা নির্ভয়ে স্কুলে যাচ্ছে, তারা সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে। সব ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণির মানুষ পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও গভীর হয়েছে, কেউ কাউকে হেয় বা অপমান করছে না। তরুণরা বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে না, বরং নিজের দেশকে এগিয়ে নিতে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষমতার লোভে নয়, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্নে সবাই একত্রিত হয়েছে।
নাগরিক সেবাগুলো দ্রুত, সহজলভ্য ও দুর্নীতিমুক্ত হবে। আর কেউ ঘুষ দিয়ে নিজের কাজ করাতে বাধ্য হয় না। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রতিটি শিশু মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে, শিক্ষার জন্য আর কোনো অভিভাবক দুশ্চিন্তা করছে না। চিকিৎসা সবার জন্য সহজলভ্য হয়েছে, আর কেউ অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে না। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতির সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে বসবাস করছে। রাজনীতি এখন আর ব্যক্তিস্বার্থে নয়, জনগণের কল্যাণে পরিচালিত নাগরিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার ও সুবিধা পাচ্ছে। কেউ আর অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে না। প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছে। দেশের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, রেলপথ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। যানজট ও দুর্ঘটনা কমে এসেছে। শহর ও গ্রাম সব জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও কার্যকর হয়েছে। আর কোনো নিরপরাধ মানুষ শাস্তি পাচ্ছে না, আর কোনো অপরাধী আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে না। নারী ও শিশুদের প্রতি সব ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্য দূর হয়েছে। তারা সমান অধিকার ও নিরাপত্তা ভোগ করছে। সবাই স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পারছে। পরিবেশ দূষণ রোধ করা হয়েছে, গাছপালা, নদী-নালা, পাহাড়-সমুদ্র সবই তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় দেশ কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। মানুষের মনে ভয় নেই, দুশ্চিন্তা নেই। একে অপরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে। রাজনীতিবিদরা স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের জন্য কাজ করছে। দেশ সত্যিকারের শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার স্বপ্ন যদি সত্যি হতো, তাহলে দেশটা সত্যিই এক স্বপ্নের দেশে পরিণত হতো যেখানে সবাই সুখী, সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ জীবন যাপন করত। জনগণের ভোটের অধিকার সম্পূর্ণ সুরক্ষিত হয়েছে, সব নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কেবল জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। প্রতিটি নাগরিক দেশের উন্নয়নে সচেতনভাবে অংশ নিচ্ছে। দুর্নীতি, অন্যায়, অপরাধ-সবকিছু সমাজ থেকে মুছে গেছে। সবাই সত্য ও ন্যায়ের পথে চলছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এতটাই উন্নত হয়েছে যে, আর কেউ বিদেশে চিকিৎসার জন্য ছুটছে না। প্রত্যন্ত গ্রামেও আধুনিক হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এতটাই স্বাবলম্বী হয়েছে যে, বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা আর নেই। বরং দেশ এখন অন্যদের সাহায্য করতে পারে। মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে, তাদের মনে আর কোনো ভয় নেই। ভবিষাৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দেশ হয়ে উঠেছে।
আমার স্বপ্ন যদি সত্যি হতো, তাহলে এই দেশ হতো সত্যিকার অর্থেই স্বপ্নের দেশ একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তির বাংলাদেশ। আমার এই স্বপ্ন দেশের শ্রমজীবী,মেহনতি কৃষক দেশপ্রেমিক মানুষের স্বপ্ন। আমার এই স্বপ্ন পূরনের দিয়ে দেশের সকল মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং চব্বিশ এর গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হবে।আমার স্বপ্ন সত্যি হলে মানবতা, মনুষ্যত্ব, নৈতিকতা, মূল্যবোধের বিজয় হবে। আমার আসুন আমার স্বপ্ন পূরণের মধ্যে দিয়ে সকলের স্বপ্ন পূরণ করি।