বাংলাদেশে গত এপ্রিলে ঈদ উল ফিতরের সময় রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়লেও মে মাসে তের শতাংশ কমে গেছে।
চলতি অর্থবছরের মে মাস জুড়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় তের কোটি ডলার কম। এপ্রিল মাসে দেশে ২০১ কোটি দশ লাখ ডলার এসেছিলো।
এমনকি গত অর্থবছরে একই সময়ে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার এসেছিলো।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সরকারের রেমিটেন্স অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ছাব্বিশ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রথম এগার মাসে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৯দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরই মধ্যে সরকার পাঁচ লাখ টাকার উপর পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাওয়ার শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতদিন পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট দিতে হতো বলে অনেকেই বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠাতে পারতেন না। কিন্তু শর্ত শিথিলের কারণে এখন থেকে কোন নথিপত্র ছাড়াই অর্থ পাঠালে প্রণোদনা দেয়া হবে।
চলতি অর্থ বছরে এপ্রিল মাস ছাড়া কার্যত বাকী সময় জুড়েই রেমিটেন্স প্রবাহ ছিলো নেতিবাচক। অনেকেরই ধারণা যে কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ আসার প্রবণতা বেড়েছে।
বিশেষ করে কোভিড পরিস্থিতি উন্নতির পরপরই দেশে আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়েছিলো অনেক।
এমনকি রপ্তানি ব্যয় ও রেমিটেন্স দিয়ে সে ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছিলো না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দাম দ্রুত বাড়তে থাকায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কম অর্থ পাঠাচ্ছিলেন।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, “নগদ যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে সেটি যোগ করার পরেও ফরমাল চ্যানেলের সাথে বেশ কিছুটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। সেটাই হয়তো বড় কারণ হতে পারে। মে মাসে যে পনের শতাংশ কমে গেছে রেমিটেন্স তার কারণও সেটা হতে পারে”।
অন্যদিকে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির পর গত অক্টোবর থেকেই দেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। লোকজনের আসা যাওয়া বেড়ে যাওয়ায় অনেকে নগদ অর্থ হাতে হাতে পাঠানোর সুযোগ নিতে পারছেন।
মূলত এভাবে আসা অর্থই কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজার থেকে টাকায় রূপান্তর করা হয় এবং সেখানে এখন ডলারের দাম ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে অনেক বেশি।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন এটি আগে থেকেই বলা হচ্ছিলো যে নন ফরমাল চ্যানেলে অর্থ আসা বেড়ে যেতে পারে।
“কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর ৮৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৯তে এনেছে এটা ঠিক। কিন্তু তারপরেও কার্ব মার্কেটে হয়তো মানুষ বেশি টাকা পাচ্ছে। সেজন্য ফরমাল চ্যানেলে টাকা আসা হয়তো কমেছে,” বলছিলেন তিনি।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলছেন রেমিটেন্স কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। তারা আশা করছে প্রবাসী অর্থ আসা শিগগিরই আবার আগের ধারায় চলে আসবে।
“রেমিট্যান্স একই গতিতে আসেনা। ঈদের সময় বেশি আসে। সামনে আবার বেশি আসবে। এটি ব্যতিক্রম কোন ব্যাপার নয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলন ও বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস
অর্থ মন্ত্রণালয় যে প্রাক্কলন করেছিলো তাতে চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স খাতে বড় প্রবৃদ্ধির আশা করা হয়েছিলো।
করোনা মহামারির সময়েও প্রবাসী আয় বাড়ানো কারণেই সরকার এ আশা করেছিলো যে কোভিড পরবর্তী সময়ে এটি আরও বাড়বে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো ঈদ উল ফিতরের সময়টি ছাড়া বাকী সময়ে এ খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়নি। বরং গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিলো একুশ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
এবারের সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে মোট ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসার কথা।
অথচ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ কম দেখা গেছে। বিশেষ করে এপ্রিল ছাড়া সব মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের কম রেমিটেন্স এসেছে।
অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে এসেছে মোট প্রায় সাড়ে সতের বিলিয়ন ডলার। এ কারণেই জুনের শেষ পর্যন্ত বাকী অর্থ আসে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ওদিকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবাসী আয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ‘অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে চলতি বছর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ মাত্র দুই শতাংশ বাড়তে পারে।
এই প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিটেন্স বৃদ্ধির হারকে অনিশ্চিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বড় উৎস হলো রেমিটেন্স। গত পঁচিশে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে বর্তমান আমদানির ধারা অনুযায়ী ছয় মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এর মধ্যে গত তেইশে মে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের কাছে অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে না।