হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলায় খুলনা জেলার অনূর্ধ্ব ১৭ দলের ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বটিয়াঘাটার এই ঘটনায় সাদিয়াসহ চারজন আহত হয়েছেন।
সাদিয়া খুলনা অনূর্ধ্ব ১৭ দলের ফুটবলার। স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে’ অনুশীলন করেন সাদিয়া। আর এ কারণে তাকে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। শনিবার (২৯ জুলাই) স্থানীয়দের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তিনি হামলার শিকার হয়েছেন।
পরবর্তীতে আহত অবস্থায় তাকে বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার স্বজনেরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নুরুল আলম নামে এক যুবককে আটক করেছে। সাদিয়ার কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলন করার সময় নুপুর খাতুন নামের একটি মেয়ে আমার ছবি তুলে নেয়। পরে বাড়িতে বাবা-মাকে দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে মন্তব্য করে। শনিবার বিকেলে তার কাছে আমি বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে সে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালি গালাজ করতে থাকে। আমি এর প্রতিবাদ করলে সে আমাকে কিল, চড়, ঘুষি মেরে মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে জখম করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা ও আমার ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তকাসহ অন্য খেলোয়াড়দের জানাই। তারা আমাকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুপুর খাতুনদের বাড়িতে যান। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বাড়ির আলাউদ্দীন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা বেগম মিলে আমাদের ওপর হামলা চালান। এতে আমার বান্ধবী মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মন্ডল আহত হয়। তারা লোহার রড দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেয়।’
আহত মঙ্গলী বাগচী বলেন, ‘তারা আমাকে আহত করে প্রায় দুই ঘন্টা হাত বেঁধে আটকে রেখেছিল। তখন আমি অজ্ঞান ছিলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি চেয়ারের সঙ্গে আমার হাত বাঁধা। রক্তে আমার গা ভিজে গেছে। জ্ঞান ফিরলে হামলাকারীরা হুমকি দেয়- মেয়ে মানুষ হয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেললে গ্রাম থেকে বের করে দিবো। তারপর আর এই এলাকায় আসা যাবে না। পরে স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।’
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘অতীতে ফুটবল খেলা নিয়ে অনেক কটূক্তির শিকার হয়েছি। এবার আহত করা হল। হত্যার হুমকিও দেয়া হল। তবে আমি খেলা ছেড়ে দিব না। যতই বাধা আসুক ফুটবলের সঙ্গে থাকবো।’
মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী বলেন, ‘শুধু ফুটবল খেলা নিয়ে আমাদের মেয়েদের নানা কটূক্তির শিকার হতে হয়। তাই অতীতে মেয়েদের নানাভাবে বুঝিয়েছি ফুটবল থেকে বেরিয়ে আসতে। এবার তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হল। মেয়েদের বলেছি- ফুটবল ছেড়ে দাও। কিন্তু তারা তো নাছোড় বান্দা, ফুটবল খেলবেই।’
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন মেয়ের মাথায় ক্ষত হয়েছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত।’
অভিযুক্ত নুপুর জানান, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়ছে তা মিথ্যা ছবি তোলা নিয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সাদিয়া সহ আরও সাত আটজন আমাদের বাড়ি এসে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের পরিবারের সকল কে তারা মারধর করে।
খুলনা বটিয়াঘাটা থানার ওসি শওকত কবীর বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
স্থানীয় তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক দেবাশীষ কুমার মন্ডল বলেন, ‘প্রাইমারি স্কুলে থাকার সময় থেকে তারা আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বঙ্গমাতা ফুটবল টিমের খেলোয়াড় ছিলেন এরা। তাদের ভালো খেলোয়াড় বানানোর জন্য এখানে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব রয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকেই চান না মেয়েরা ফুটবল খেলুক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা জরুরি।’