আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস আজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে বিরাট একটি অংশ দেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় বাস করে। বাংলাদেশে বাংলা ছাড়াও ৪০টি ভাষা রয়েছে, যার প্রায় সবই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। তবে এসব ভাষার অধিকাংশই এখন বিলুপ্তির পথে। কার্যকর ব্যবহার ও উদ্যোগ না থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন গবেষকেরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার স্বার্থে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।
একটি দেশের উন্নয়নে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অবদান ও অর্জনকে স্বীকৃতি দিতেই জাতিসংঘ ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ঘোষণা করে।
বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও চর্চাকে অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ এই দিবস পালন করে থাকে। প্রতি বছর দিবসটি পালন করার জন্য একটি প্রতিপাদ্য বেছে নেওয়া হয়। এ বছর ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণেরাই মূল শক্তি’।
বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার, স্বীকৃতি ও দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে নৃ-তাত্ত্বিক ও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে কোনো সুনির্দিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই। বাংলাদেশের ভূমিজ সন্তান বা আদি বাসিন্দা হলো এখানকার মূল জনগোষ্ঠী, যারা নানা পরিচয়ের পরিক্রমায় বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু বিগত শতকের শেষ দশকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে আগত, বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৭০০ থেকে ৩০০ বছর আগে আগত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, যাযাবর, তপশিলি সম্প্রদায় বিদেশি বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার ইন্ধনে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করে স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন শুরু করে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের দেশের কিছু মানুষ ও এনজিও আছে, যারা কিছু দেশের আশীর্বাদপুষ্ট। আদিবাসীদের নামে তারা কোটি কোটি টাকা বিদেশি সাহায্য হিসেবে আনছে এবং সেই টাকা তারা নিজেরাই আত্মসাৎ করছে। তিন পার্বত্য জেলার একাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ জানান, বর্তমান সরকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। অনেক উন্নয়ন হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজধানীতে সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র রোধিপ্রিয় লারমা।