জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে ‘প্রেমিক’ উরফি জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মেকআপ আর্টিস্ট মিহির মোহনের কাছেও সুরাহা খুঁজছে র্যাব।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হিমুর মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। ব্রিফিংয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, এক বছর আগে হিমুর মা মারা যান। এরপর থেকেই হিমু মেকআপম্যান মিহিরকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টর এলাকায় নিজের ফ্ল্যাটে একাই বাস করছিলেন। মিহিরকে পালিত ভাই হিসেবে পরিচয় দিতেন হিমু।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় সরাসরি উরফি জিয়াকে আসামি করা হয়েছে। তবে র্যাব এ বিষয়ে আরও তদন্ত করছে। কারণ, ঘটনার সময় বাসায় মিহিরও ছিলেন।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উরফি জিয়া জানিয়েছেন, গত দু-তিন বছর ধরে বিগো লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন হিমু-উরফি। এ পর্যন্ত দুজনেই বিপুল পরিমাণ অর্থ খুইয়েছেন। উরফি মাদক গ্রহণ করতেন, আর মাদক এনে দিতেন মিহির। অভিনেত্রী হিমুও কোনো হতাশা বা দুঃখ থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে র্যাব জানিয়েছে, মিহিরের মাদক সম্পৃক্ততার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এই মেকআপম্যান অন্য অভিনয়শিল্পীদেরও মাদক দেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) মারা যান ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। তাঁর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয় রহস্য। প্রথম থেকেই কেউ কেউ বলেছেন এটি আত্মহত্যা, কেউ বলছেন হত্যা। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে হিমুর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন না থাকলেও তার গলায় রশির দাগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওইদিন বিকেলে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিমুকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে আসেন উরফি ও মিহির। কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করার পরপরই পালিয়ে যান উরফি। পরে জানা যায়, উরফির সঙ্গে হিমুর সম্পর্ক ছিল। মাঝে বিয়ের কথাবার্তাও হয়েছে। কয়েকদিন ধরে ঝগড়া-বিবাদও হয়েছে।
উরফি র্যাবকে বলেছেন, ঘটনার সময় হিমুর রুমে ছিলেন তারা দুজন। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো। পাশের রুমে ছিলেন মিহির। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হিমু বলেন, আমি কি মরতে পারি না? দেখ, পারি কিনা। এই বলেই তিনি রশিতে ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েন। এই সময় খাটে বসা ছিলেন উরফি জিয়া। তিনি ছুটে গিয়ে হিমুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
র্যাব জানায়, ২০০০ সালে প্রথম বিয়ে করেন হুমায়রা হিমু। ২০০৫ সালে তার বিচ্ছেদ হয়। অন্যদিকে ২০১২ সালে উরফি জিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় হিমুর। সেসময় তার এক খালাতো বোনের সঙ্গেও পরিচয় হয় উরফির। সম্পর্কে জড়িয়ে উরফি ও খালাতো বোনের বিয়েও হয়। কিন্তু মাত্র দুইমাস পরই তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এই ঘটনার পরও উরফি আর হিমুর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। অন্যদিকে তৌফিক নামের এক তরুণের সঙ্গে হিমু সম্পর্কে জড়ান। ২০১৭ বা ১৮ সালের দিকে তৌফিক আত্মহত্যা করেন। এতে হিমু মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে উরফির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এবছর তারা বিয়ে করার কথাও ভেবেছেন। এরপর হিমুর বাসায় উরফির যাতায়াত বাড়ে। বিগো অ্যাপে দুজন জুয়া খেলতেন।
হিমুর মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে র্যাব জানিয়েছে, হিমু মারা যাওয়ার দিন বিকেলে অন্যান্য দিনের মতো হিমুর সঙ্গে দেখা করতে উত্তরার বাসায় যান উরফি জিয়া। বাসার দরজা খুলে দেন মেকাপম্যান মিহির। সেখানে উরফি এবং হিমুর মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে হিমু আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হিমু অন্য রুম থেকে মই নিয়ে আসেন। রুমে ফ্যানের হুকের সঙ্গে আগে থেকেই প্লাস্টিকের রশি বাঁধা ছিল। এর আগে উরফিকে ভিডিওকলে আত্মহত্যার জন্য ওই ঝুলানো রশি দেখিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন হিমু। ওই রশিতেই তিনি হুট করে ঝুলে পড়েন। পরে মিহির ও উরফি রশি কেটে হিমুকে নামান। পরবর্তীতে তারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার হিমুর মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশকে জানানোর কথা বললে উরফি পালিয়ে যান।
এদিকে তদন্তে হিমুর মৃত্যুর সঙ্গে মেকআপম্যান মিহিরের অন্য একটি ঘটনার মিল পেয়েছে র্যাব। দেশের আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ মারা যান ২০১৮ সালের ২২ মে। সেদিন তাজিনকেও হাসপাতালে এনেছিলেন এই মিহির। পরিবারের সদস্যরা কেউ ছিলেন না সেখানে। একইভাবে হিমুরও শেষসময়ের সঙ্গী ছিলেন এই মিহির। তাই হিমুর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে মিহিরের কাছে সুরাহা মিলবে বলেও ধারণা করছে র্যাব।