তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে গত ১০ দিনে স্পেনে পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ গরমের কারণে ইউরোপের এই দেশটিতে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। বুধবার (২০ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বুধবার বলেছেন, স্পেনে গত ১০ দিন ধরে রেকর্ড তাপপ্রবাহ চলছে এবং এর জেরে এই সময়ের মধ্যে দেশে ‘৫০০ জনেরও বেশি লোক’ মারা গেছেন।
এএফপি বলছে, তাপপ্রবাহে প্রাণহানির বিষয়ে গত সোমবার কার্লোস তৃতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করেছেন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ। স্প্যানিশ এই সংস্থার পরিসংখ্যানটি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে তাপজনিত মৃত্যুর হিসাব বের করে থাকে।
স্প্যানিশ এই স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট জোর বলেছে, তাপপ্রবাহে প্রাণহানির বিষয়ে তাদের উল্লেখ করা সংখ্যাটি একটি পরিসংখ্যানগত অনুমান এবং এটি সরকারি মৃত্যুর রেকর্ড নয়।
প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বুধবার বলেন, ‘পরিসংখ্যান অনুসারে, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে এই ধরনের উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আমি নাগরিকদের চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে আহ্বান জানাচ্ছি। (বিদ্যমান পরিস্থিতিতে) জলবায়ু জরুরি অবস্থা একটি বাস্তবতা।’
স্পেনসহ পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে সম্প্রতি তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠে যায়। এর ফলে এসব অঞ্চলে বহু সংখ্যক দাবানল ছড়িয়ে পড়ে।
স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা এইএমইটি বুধবার জানায়, গত ৯-১৮ জুলাইয়ের তাপপ্রবাহ ছিল স্পেনে রেকর্ড করা সবচেয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ। এইএমইটি’র মুখপাত্র বিট্রিজ হারভেলা বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে আধুনিক রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে ভৌগলিক সম্প্রসারণ এবং সময়কালের পরিপ্রেক্ষিতে এটি ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ।’
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আরও দু’টি তাপপ্রবাহ এর আগেও দীর্ঘসময় ধরে স্থায়ী ছিল। এর একটি ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ২৬ দিন স্থায়ী ছিল এবং অন্যটি ছিল ২০০৩ সালের আগস্টে। এটি স্থায়ী ছিল একটানা ১৬ দিন।
অবশ্য, শুধু স্পেনেই নয়, গোটা ইউরোপজুড়েই চলছে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়ায়ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহ চলছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, ভয়াবহ তাপপ্রবাহের কারণে গত দুই সপ্তাহে পর্তুগালে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাজ্যে গত সোমবার গরমের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়েছিল। মঙ্গলবার দেশটিতে কোনো কোনো এলাকার তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে। বুধবার তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। অবশ্য অন্য বছরগুলোতে এসময় যুক্তরাজ্যের গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে।