রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেওয়ায় সন্তুোষ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ। একই সঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
আপিল বিভাগের আদেশের পর অনুভূতি প্রকাশ করে সুলতানা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ওরা এখনও বেঁচে আছে, নিঃশ্বাস নিচ্ছে, খাচ্ছে ঘুমাচ্ছে। কই আমরা তো ১৭ বছর ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারিনি। অনেক যন্ত্রণা নিয়ে জীবন পার করেছি।
তিনি বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ এই আদেশ দেওয়া পর নিহতের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ এসব কথা বলেন।
রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আসামিদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করে আদেশ দেন আদালত। এর ধারাবাহিকতায় সেটি নিয়ে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন বহাল রেখে গত বছরের ৫ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর। যাবজ্জীবন বহাল থাকা দুই আসামি হলেন- বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের সহোদর ভাই আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় (শ্যালক) নাজমুল।
২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পরে মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর এবং যাবজ্জীবন সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবদুস সালাম পৃথক আবেদন করেন। চেম্বার আদালত হয়ে রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে ওঠে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদেশ দেওয়া হয়।
এ সময় শিক্ষক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ ও মেয়ে শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে মহিউদ্দিনের পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান, জাহাঙ্গীরের পক্ষে আইনজীবী এস এন গোস্বামী ও সালামের পক্ষে নিখিল কুমার সাহা শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম. সাইফুল আলম।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৫৯ বছর বয়সী অধ্যাপক তাহের আহমেদ নিহত হন এবং পুলিশ ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরকে মৃত্যুদণ্ড আসামি সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অধ্যাপক তাহের জীবিত থাকলে এই পদে মহিউদ্দিনের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ শূন্য- এ ধারণা থেকে শুধু অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই তাহেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম, আবদুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধা, সেবা ও কম্পিউটার পেতে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যায় মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন ও সে অনুযায়ী অধ্যাপক তাহের হত্যার অপরাধ সংঘটন করেন