জামাতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান ব্রিটেন সফরের অংশ হিসেবে ১৯ নভেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার লন্ডন সময় দপুর এক ঘটিকায় পূর্ব লন্ডনের মায়দাগ্রীল রেষ্টুরেন্টে ১৯৭১ সালে জামাতে ইসলামের ভূমিকা এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে লন্ডনের বাংলামিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেন। জামাতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন একাত্তর সালে সকলেই এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। ৭০ এর নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে বিজয়ী হলেও পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্রো বিজয়ী হন। ভুট্রো চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। বিজয়ী দল হিসেবে শেখ মুজিব মানতে রাজি হননি। নিরুপায় হয়ে পড়েন প্রেসিডেন্ট এহিয়া খান। পাকিস্তানীরা শেখ মুজিবকে বন্দি করে নিয়ে যায়। তিনি সকল বিষয় পরিস্কার করতে পারেননি। তিনিও চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। দেশ ভাগ করতে নয়।
এককোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। এসময় জামাত আমির অত্যন্ত সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন দেশের ভেতর যারা ছিল সকলেই পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। তখন ভারত চাইলে পাকিস্তান দু‘টুকরো হতোনা। ভারত চেয়েছিল পাকিস্তান ভেঙ্গে যাক। মৌলানা ভাসানী প্রথমে ভারতে গেলেও পরে পাকিস্তানে ফেরত আসেন। তার নামের আগে মৌলানা দেখে ভারত সরকার তাকে এরেষ্ট করে। আসলে তিনি কোন আলেম ছিলেনা, তার অনুসারীরা তাকে মৌলানা ডাকতেন। তিনি বিশেষ ডিজাইনের টুপি পড়তেন পোষাক আসাক ছিল আলেমের মত।
তাই যারা ভারতে যেতে পারেনি তাদের কোন গত্যন্তর ছিলনা, হয় যুদ্ধ করতে হতো না হয় পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া। তখন ছিল এক পাকিস্তান, তাই সকলেই এক পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। দেশ স্বাধীনের পর , যারা অপরাধ করেছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ৪১ হাজার মামলা হয়। শুধু যারা হত্যা, অগ্নিসংযোগ নারীধর্ষন করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
হাসিনা সরকার যাদের মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্যাঙ্গারু আদালতের মাধ্যমে হত্যা করেছে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তাদের কারো উপর মামলা ছিলনা। ৪২ বছর পর হাসিনা সাজানো মামলা দিয়ে জামাত নেতাদের হত্যা করেছে। শুধু আমাদের নেতা ইউসুফ সাহেবের উপর মামলা হয়েছে। তিনি শেখ মুজিবের সময় দোষ প্রমান না হওয়ায় মামলা থেকে খালাস পান।
জামাত ক্ষমতায় গেলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়বে। ২০২৪ এর গণঅভ্যূত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে পূনরবাসিত করা হবে। আমরা নির্বাচনের জন্য তাড়াহুরো করছিনা। সংস্কার শেষ করে নির্বাচন হলে এটা হবে জাতির জন্য কল্যানকর। ড. ইউনুসের সরকারের উপর আমাদের বিশ্বাস আছে, সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিলে দেশের ভবিষ্যৎ ভাল হবে। তাই নির্বাচন নিয়ে আমাদের তাড়াহুড়ো করার কোন কারন নেই। তিনি বলেন যারা দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গণহত্যা এবং দুর্নিতির দায়ে সকলের বিচার হবে। শুধু গণহত্যা নয় গণতন্ত্রকে ধ্বংশ করার জন্যও তাদের বিচার হবে। মিট দ্যা প্রেস অনুষ্টানে শুধু মাত্র তাদের অনুসারী সাংবাদিক ও তাদের মিত্ররা উপস্থিত ছিলেন। দেখে দেখে সাংবাদিকদের আমন্ত্রন জানানো হয়। পরে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের জন্য আয়োজন করা হয় মধ্যাহ্ন ভোজের । জামাত আমির ডাঃ শফিকুর রহমান প্রবাসী সাংবাদিকদের কৃতজ্ঞতা জানান।
আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্ট, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য লন্ডনে ডাঃ শফিক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সত্য একবার বললেই প্রতিষ্ঠিত হয় কারণ সেটা সত্য। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার বলতে হয়। আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্ট এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। এর আগে তিনি ১৭ নভেম্বর রোববার লন্ডনে রয়েল রিজেন্সী হলে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৬ বছর দেশের মানুষের সাথে আওয়ামীলীগ যে আচরণ করেছে তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। আমরা চাই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক। ডাঃ শফিক বলেন, অন্যায় বিচার কি সেটার আমি নিজেও একজন ভিকটিম। আমাকে গ্রেফতার করে বলা হয়েছে, আমি নাকি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি ! তিনি বলেন ২০০৬ সালে লগিবৈঠার তান্ডব করে নিরস্ত্র ছাত্র জনতাকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সেনাবাহিনীর ৫৭জন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। ২০১৩ সালে হেফাজতের নিরিহ কর্মীদের রাতের আঁধারে খুন করা হয়। এই খুন মিশনের পর তারা প্রচন্ড আঘাত করে জামায়াতে ইসলামীর উপর। আমাদের উপর যখন আঘাত আসে, তখন জাতির বিবেকবান নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করতে পারেননি যে এই আঘাত শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে। ডাঃ শফিক সে পরিস্থিতির বর্ণনা করে বলেন, আমরা যখন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি তখন আমাদের অনেক বন্ধুকে বলেছিলাম, আসুন একসাথে লড়াই করি। তা না হলে ফ্যাসিবাদের কবলে সবাইকে পড়তে হবে। কিন্তু অনেকেই ভেবেছিলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি জামায়াতের উপর দিয়ে যায় তবে দেশ বুঝি শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু না, সেটার পরিণতি আজ দেশবাসীর কাছে একটি জ্বলন্ত ইতিহাস। আমরা হয়ত সেদিন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।
জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক আমীরে জামায়াত প্রফেসর গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের সকল নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ২০২৪ এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সাথে রাস্তায় নেমে আসে। ডাঃ শফিক বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, অনেক জীবন দিতে হয়েছে, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে, দফায় দফায় জেলে গিয়েছেন, চাকুরীহারা হয়েছেন এমনকি কারো কারো বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। এই সবগুলোই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু আমরা স আন্দোলনের সরাসরি ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই বছরের পহেলা জুলাই থেকে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিল এবং তাদের ডাকে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে দুঃশাসনকে চূড়ান্ত বিদায় জানিয়েছে।