‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত দুবছর করোনা মহামারির কারণে থমকে ছিল সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। সেখান থেকে বেরিয়ে আগামী দিনগুলোয় উন্নয়নের গতিধারা ফিরে আসবে-এমন স্বপ্ন দেখছেন তিনি। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট এরই মধ্যে ঝুঁকিতে ফেলছে বিশ্বসহ দেশের অর্থনীতিকে। কঠিন মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
তবে উন্নয়নের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে থাকবে অর্থনীতি-এমন প্রত্যাশায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। গুরুত্ব দিতে ভোলেননি প্রবৃদ্ধিকে। চলতি অর্থবছর থেকে বেশি অর্জন হবে-এমন আভাস দিয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন ৭.৫ শতাংশ। তবে গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের।
যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার সময় মনে রাখতে হবে-প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হলো নাকি ৭ শতাংশ, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাথাব্যথা নেই। দ্রব্যমূল্য নিয়েই তারা বেশিমাত্রায় উদ্বিগ্ন। এছাড়া অধিক মাত্রার মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্য ও বৈষম্য বৃদ্ধি করবে। তাই ভারসাম্য রক্ষার সময় এ বছর মূল্যস্ফীতিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণ ছাড়াও আটটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বাজেটে। এগুলো হচ্ছে-ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লি উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অধিক খাদ্য উৎপাদন এবং সারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা। এছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, নিম্ন আয়ের মানুষকে বিনা বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি বাড়ানো। আর কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়ন আরও সম্প্রসারণ করাও অগ্রাধিকার তালিকায় থাকছে।
নতুন বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি (অনুদানসহ) বাজেট হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, আর অনুদান ব্যতীত ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে তিনি চাপবোধ করছেন। তবে সবশ্রেণির মানুষ যাতে উপকৃত হন, সেভাবে তিনি বাজেট প্রণয়ন করছেন। ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পোদ্যোক্তারা সবাই উপকৃত হবেন। সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকবে না-এমন কিছু বাজেটে চাপিয়ে দেবেন না বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
বৈশ্বিক সংকটে চাপের মধ্যে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আগামী দিনগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রপ্তানি বিকেন্দ্রীকরণে হাত দেবেন অর্থমন্ত্রী। এজন্য পোশাকশিল্পের বাইরে অন্যান্য খাতের জন্য করপোরেট কর কমিয়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হবে। বর্তমানে পোশাক খাত যে হার উপভোগ করছে, সব রপ্তানি খাতের জন্য সেই একই ১২ শতাংশ হারে করপোরেট কর নির্ধারণ করা হবে। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে উৎসাহিত করতে এটি করা হবে। এছাড়া সবুজ বা পরিবেশবান্ধব শিল্পের পণ্য ও সেবার করহার ১০ শতাংশ করা হবে। অন্য সব খাত বর্তমানে পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানির জন্য ৩০ শতাংশ কর দেয়।
সূত্র জানায়, উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে সরকার উৎপাদকদের কাঁচামাল সরবরাহের ওপর উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করতে চলেছে। এছাড়া ব্যবসায়িক পণ্যের সরবরাহের ওপর উৎসে করের হার ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হবে। এছাড়া ইন্টারনেট সার্ভিসের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে করের প্রস্তাব আসছে। বর্তমানে সন্তান মা-বাবার কাছ থেকে কোনো উপহার হিসাবে টাকা, জমি বা সম্পত্তি পেলে তা করমুক্ত। কিন্তু বাবা-মা সন্তানের কাছ থেকে পেলে তা করযোগ্য রয়েছে। আগামী বছর এই কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব আসছে।
শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের শর্ত একই থাকছে। তবে সেটি বৈধ আয় অপ্রদর্শিত থাকলেই তা কার্যকর হবে। এছাড়া শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আয়ের উৎস সম্পর্কে দুদক প্রশ্ন করতে পারবে।
বিদেশে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে নতুন বাজেটে ঘোষণা ও সুবিধা দেওয়ার কথা থাকছে। বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে এবার বিদেশ থেকে ডলার আনার প্রক্রিয়া উদার করে দিয়েছে সরকার। ফলে প্রবাসী আয় বাবদ দেশে যত পরিমাণ ডলার পাঠানো হোক না কেন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। আবার এর বিপরীতে আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনাও দেওয়া হবে। এর আগে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে আয়ের নথিপত্র জমা দিতে হতো।
অন্যদিকে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ঋণের ওপর করারোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ মওকুফ করলে তা করমুক্ত রয়েছে। বাজেটে ব্যক্তি করদাতা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। মন্দ ঋণের প্রবণতা হ্রাস করতেই বাজেটে এ পদক্ষেপ থাকছে। এ বিধান কার্যকর হলে মওকুফ করা খেলাপি ঋণের ওপর প্রতিষ্ঠানকে করপোরেট কর দিতে হবে।
এছাড়া আগামী অর্থবছর থেকে সরকারি কিছু সেবা পেতে রিটার্ন জমার স্লিপ দেওয়ার বিধান আসছে। মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, ল্যাপটপের মতো নিত্যব্যবহার্য বেশকিছু পণ্য কিনতে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। সব মিলিয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি চাপে থাকবে। আগের নিয়মেই বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হলে আয়কর দিতে হবে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম আয়করের পরিমাণও আগের মতোই থাকছে। নতুন বাজেট বর্তমান সরকারের নির্বাচনীয় সময়ের একটি পূর্ণাঙ্গ শেষ বাজেট। ফলে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ব্যাপক কর্মসৃজনের। এজন্য বিনিয়োগের বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নতুন জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৯ এবং সরকারি ৬.৬ শতাংশ।
যেসব খাত থেকে টাকা আসবে : রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর কর ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ বছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা হচ্ছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
টাকা খরচ হবে যেভাবে : আগামী বছরে পরিচালন খাতে ব্যয় হবে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এই আবর্তক ব্যয় থেকে দেশীয় ঋণের সুদ ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ খাতে ব্যয় হবে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর মূলধনীয় ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এছাড়া উন্নয়ন খাতে খরচ করা হবে ২৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম খাতে ৬ হাজার ৫০১ কোটি এবং খাদ্য খাতে ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
ঘাটতি পূরণ যেভাবে : নতুন বাজেটে ঘাটতি (অনুদানসহ) হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর প্রভাবে দেশে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ভর্তুকির অঙ্ক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে গিয়ে ভর্তুকির অঙ্ক বাড়িয়ে মোকাবিলা করা হবে। পাশাপাশি সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে করোনা মহামারি ঢেউয়ের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে অর্থনীতি। এ ধারাকে ধরে রাখতে প্যাকেজের বাকি অর্থের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বাজেটে।
এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে বাংলাদেশে। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৬ শতাংশ। অর্থ বিভাগের ধারণা ব্যাপক ভর্তুকির ফলে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকবে। এতে নিয়ন্ত্রণ থাকবে মূল্যস্ফীতির। আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ অর্থের প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
করোনায় অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে আনতে এ বছর এর আওতা বাড়ানো হবে। তবে কোনো কর্মসূচির ভাতার অঙ্ক বাড়ানো হবে না। নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আরও ১১ লাখ ব্যক্তিকে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকারের অতিরিক্ত আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে এ খাতে।
বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কোভিড-১৯ মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ খাত। বেসরকারি একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে আসে কমপক্ষে আড়াই কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে এই মহামারিতে। সেই ক্ষত না শুকাতেই বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা অন্যান্য দেশের মতো এসে বাংলাদেশেও পড়েছে। এমন চ্যালেঞ্জিং সময়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে ১৪ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আসন্ন বাজেট বর্তমান সরকারের পূর্ণাঙ্গ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করা হবে, সেটি অর্ধেকের বেশি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ফলে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী বাজেটে কর্মসংস্থানকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের মতে, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ব্যবসাবাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া কোভিড অভিঘাত-পরবর্তী অর্থনীতি এখনো পুরোপুরি চাঙা হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে রয়েছে মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ। অনেকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে অনেকটা বেগ পেতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট www.mof.gov.bd-এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে। পাশাপাশি দেশ বা বিদেশ থেকে ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফর্ম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময় এবং পরে তা কার্যকর করা হবে। ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত সরকারি ওয়েবসাইট লিংকের ঠিকানাগুলোয়ও বাজেট সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। https://nbr.gov.bd-https://plandiv.gov.bd, https://imed.gov.bd, https://www.dpp.gov.bd, https://pmo.gov.bd
এ পর্যন্ত যত বাজেট : আজ দেশের ইতিহাসে ১২তম ব্যক্তি হিসাবে চতুর্থবারের মতো বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে গত ১০ বছর টানা বাজেট দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। প্রথম বাজেটসহ তিনি মোট তিনবার (১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-৭৪ ও ১৯৭৪-৭৫) বাজেট পেশ করেন। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আজিজুর রহমান মল্লিক।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান টানা তিনবার (১৯৭৬-৭৭, ১৯৭৭-৭৮ ও ১৯৭৮-৭৯) বাজেট পেশ করেন। ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এমএন হুদা বাজেট পেশ করেন। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে এম সাইফুর রহমান ১৯৮০-৮১ ও ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে দুবার এবং ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৪-৯৫, ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে পাঁচবার এবং ২০০২-০৩, ২০০৩-০৪, ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭ পর্যন্ত আরও পাঁচবারসহ সর্বমোট ১২ বার বাজেট পেশ করেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে দুবার এবং ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে টানা ১০ বারসহ সর্বমোট ১২ বার বাজেট পেশ করেন।
১৯৮৪-৮৫, ১৯৮৫-৮৬, ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৭-৮৮ এই চার অর্থবছর বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী এম সায়েদুজ্জামান। ১৯৮৮-১৯৮৯ অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল এমএ মুনিম। তিনি দুবার (১৯৮৮-৮৯ ও ১৯৯০-৯১) বাজেট পেশ করেন। ১৯৮৯-৯০ অর্থবছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ওয়াহিদুল হক। তিনি ওই অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে শাহ এএমএস কিবরিয়া ১৯৯৬-৯৭, ১৯৯৭-৯৮, ১৯৯৮-৯৯, ১৯৯৯-০০, ২০০০-০১ ও ২০০১-০২ অর্থবছরে মোট ছয়বার বাজেট পেশ করেন। এছাড়া ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ এই দুই অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।