ঢাকাই চলচ্চিত্রে সালমান শাহের অভিষেক হয় সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর চার বছরের ক্যারিয়ারে মোট ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এসব ছবিতে তিনি মৌসুমী, শাবনূর, লিমা, শাবনাজ, শাহনাজসহ অনেক জনপ্রিয় নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন।
প্রথম ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে সালমানের জুটি দারুণ জনপ্রিয় হয়। অনেক নির্মাতাই তাদের নিয়ে ছবি করতে আগ্রহী হতে থাকেন। তারা শুরু করেন ‘অন্তরে অন্তরে’ নামে নতুন একটি ছবির শুটিংও। কিন্ত ব্যক্তি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে এই জুটি আর তেমন করে কাজ করেননি অনেকটা সময়। পরবর্তী সময়ে ‘দেনমোহর’ ছবিতে তারা কাজ করলেও জুটি হিসেবে সালমান অমর হয়ে আছেন শাবনূরের সঙ্গে। ‘তুমি আমার’ ছবি দিয়ে শুরু হয় ঢাকাই সিনেমাতে দুর্দান্ত জনপ্রিয় জুটি সালমান-শাবনূরের পথচলা।
১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমাতে সালমানের নায়িকা ছিলেন মৌসুমী। এই ছবি দিয়ে সালমান শাহ, মৌসুমী ও সংগীতশিল্পী আগুনের একসঙ্গে ঢাকাই সিনেমায় অভিষেক হয়। এরপর মৌসুমীর সঙ্গে সালমান শাহ অভিনয় করেন ‘দেনমোহর’ চলচ্চিত্রে। এই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। এছাড়াও সালমান- মৌসুমী জুটি অভিনয় করেন ‘অন্তরে অন্তরে’ ও ‘স্নেহ’ নামের আরো দুটি সিনেমায়। ঢাকাই চলচ্চিত্রে সবচেয়ে সফল জুটি সালমান শাহ-শাবনূর। প্রয়াত নির্মাতা জহিরুল হক ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করেন ‘তুমি আমার’। এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন সালমান-শাবনূর। এটি সালমানের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হলেও নায়িকা হিসেবে শাবনূর তখন বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তবে সালমানের সঙ্গে জুটি গড়ার পরেই শাবনূরের ক্যারিয়ারে সুবাতাস বইতে থাকে। এরপর একে একে ‘সুজন সাথী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভিতর আগুন’ মোট ১৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন সালমান-শাবনূর জুটি। সবগুলো ছবিই ছিল সুপারহিট। এই সিনেমাগুলোর প্রায় সবগুলো দারুণ ব্যবসাসফল। নির্মাতারাও আগ্রহী হয়ে ওঠেন এই জুটিকে নিয়ে। আরো বেশ কিছু ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। তার মধ্যে অন্যতম ‘নয়নমনি’, ‘তুমি শুধু তুমি’, ‘মন মানে না’, ‘কুলি’, ‘অধিকার চাই’, ‘মধু মিলন’, ‘কে অপরাধী’, ‘শেষ ঠিকানা’ ইত্যাদি। সালমানের মৃত্যুর পর রিয়াজ, ওমর সানী, অমিত হাসানকে দেখা গিয়েছিল ছবিগুলোতে। শাবনূরের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে জীবন রহমান পরিচালিত ‘প্রেম যুদ্ধ’ চলচ্চিত্রে জুটি বাঁধেন সালমান-লিমা। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কন্যাদান’ চলচ্চিত্রেও দেখা যায় এই জুটিকে। কিন্তু এই জুটি খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৯৯৫ সালে হাফিজউদ্দিন পরিচালিত ‘আঞ্জুমান’ চলচ্চিত্রে জুটি বাঁধেন সালমান-শাবনাজ। এই সিনেমাটির পর ‘আশা ভালোবাসা’ ও ‘মায়ের অধিকার’ সিনেমাতেও সালমান-শাবনাজ জুটিকে দেখা যায়। নাঈমের সঙ্গে জুটির বাইরে শাবনাজের সঙ্গে সফল জুটি ছিলেন সালমান শাহ। এছাড়াও সালমান শাহের সঙ্গে অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকজন নায়িকা। এর মধ্যে রয়েছেন বৃষ্টি, শিল্পী, কাঞ্চি, শ্যামা, সাবরিনা, শাহনাজ। ১৯৯৬ সালে মালেক আফসারী পরিচালিত ‘এই ঘর এই সংসার’ চলচ্চিত্রে সালমানের নায়িকা হিসেবে দেখা যায় বৃষ্টিকে। একই বছরে মডেল ও অভিনেত্রী শিল্পী সালমানের সঙ্গে অভিনয় করেন ‘প্রিয়জন’ চলচ্চিত্রে। ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমায় সালমান শাহের সঙ্গে জুটি হন শাহনাজ। এই ছবিটি সালমান শাহ মারা যাওয়ার পরপরই মুক্তি পায়। আর ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আশা ভালোবাসা’ ছবিতে শাবনাজের পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল সাবরিনাকেও। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শুধু তুমি’ ছবিতে সালমানের নায়িকা হিসেবে ছিলেন শ্যামা এবং ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ছবিতে শাবনূরের সঙ্গে সালমানের আরেক নায়িকা ছিলেন সোনিয়া। সেই ছবিটি ১৯ কোটি টাকা ব্যবসা করে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক আয় করা চলচ্চিত্রের তালিকায় দ্বিতীয় হয়ে আছে।