সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় তিন পরিবারের তিনটি বাড়ির বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) বিরুদ্ধে। কবরস্থানসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য সেতুটি বরাদ্দ হলেও স্থানান্তর করে আরেকটি সেতুর কাছে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চলাচলে সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণাধীন সেতুটি জনস্বার্থে কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন। তবে এলজিইডি বলছে, এলাকাবাসীর স্বার্থেই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি উপজেলার বেংনাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ-ধানগড়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে স্থানীয় আব্দুর রহিম মাস্টারের বাড়ির সামনে বেংনাই খালের ওপর ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। মাঝে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর পিলার নির্মাণ শেষ করেছে। এখন চলছে উপরিভাগ (গার্ডার) নির্মাণের কাজ। এই নির্মাণাধীন সেতুর ৭০ মিটার (প্রায় ২৩০ ফুট) উত্তরে রয়েছে আরেকটি সরু সেতু।
স্থানীয় লোকজন জানায়, নির্মাণাধীন সেতুর কাছে রহিম মাস্টারদের বংশের তিন পরিবারের তিনটি বাড়ির ২৪-২৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। শুধু তারাই সেতুটিতে যাতায়াতের সুবিধা পাবে।
রহিম মাস্টারের প্রতিবেশী যুবক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মসজিদ, স্কুল, মাদরাসা ও কবরস্থানে যাতায়াতের কথা বলে সেতুর প্রকল্প পাস করা হয়েছে। অথচ কবরস্থান ছাড়া ওই স্থানে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। যেখানে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে (কবরস্থান থেকে এক হাজার ফুট উত্তরে) তাতে কবরস্থানে যাওয়া যাবে না। সেতুর সামনে কোনো সংযোগ সড়কও নেই। কয়েকটি বাড়ির লোকজন ছাড়া কেউ সেতুটির সুফল পাবে না।
প্রতিবেশী রওশন আরা বেগম বলেন, কেউ মারা গেলে পানির মধ্যে দিয়েই লাশ নিতে হয়। যেখানে সেতু হচ্ছে, তাতে জনগণের কোনো কাজে আসবে না।
বৃদ্ধ কৃষক সোনা উল্লা বলেন, ‘ওরা দল করে, তাই নিজের বাড়ির সামনে জোর করে সেতু করছে। এতে জনগণের কোনো উপকার হবে না। ’
পাশের হাসিল গ্রামের আবু সাঈদ বলেন, ‘খালের মধ্যে বুক সমান পানি পাড়ি দিয়ে মানুষ মাটি দিতে কবরস্থানে যেতে হয়। সেখানে সেতু নির্মাণ না করে দু-একটি পরিবারের সুবিধার জন্য সেতু নির্মাণ করা অন্যায়। ’
এ বিষয়ে আব্দুর রহিম মাস্টারের ছেলে রায়গঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহিদ উর রহিম জাহিদ বলেন, ‘আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ত্যাগ ও নির্যাতন সহ্য করেছে। বাড়ির সামনে খাল থাকায় যাতায়াতে কষ্ট, তাই অনেক তদবির করে সেতুটি পাস করে আনা হয়েছে। ’ তিনি জানান, পুরনো সেতু হয়ে তাঁদের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। তাঁদের কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করতে হয়।
সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় এমপির ডিও লেটারের ভিত্তিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। এক পরিবারের সুবিধার জন্য নয়, এলাকাবাসীর স্বার্থেই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে জনগণ সেতুটির সুফল পাবে।
৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৫১২ টাকা। গত বছরের ১৪ মার্চ সেতু নির্মাণ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিসিএএস জেবির হয়ে ঠিকাদার আমিনুল ইসলাম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন। ঠিকাদার এরই মধ্যে এক কোটি ৫৮ লাখ ছয় হাজার ৪৬১ টাকা (৬২ শতাংশ) বিল উত্তোলন করেছেন।