টানা ছয় দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ৯ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট এবং সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দারা পানিবন্দি। অনেক স্থানে কাঁচাপাকা রাস্তা ডুবে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেট শহরেও মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে হাওরের ঢেউ বাড়িঘরে আছড়ে পড়ছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষেরা। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক ডুবে যাওয়ায় গত রবিবার থেকে ঐ সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়রা বলেন, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় বৃষ্টি ও ঢলের আতঙ্ক তাদের এখনো তাড়া করছে। এ অববস্থায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী ও আশ্রয় শিবির প্রস্তুত রেখেছে। সিলেট বিভাগে বন্যাজনিত করণে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘পানিবন্দিদের উদ্ধারে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় ৪৪৯ টন চাল, ২২ লাখ টাকা ও ২ হাজার শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে।
৯৫ হাজার হেক্টর জমির আউশ নিমজ্জিত
চাষিরা আমন ধানের বীজতলা নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। কারণ পানি বাড়লে মহাবিপদ। অনেক স্থানে আবার আউশ ও সবজিখেত নিমজ্জিত হয়েছে। সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্র্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম ইত্তেফাককে জানান, সোমবার পর্যন্ত ৯৫ হাজার হেক্টর জমির আউশ ফসল ডুবে গেছে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি নেমে যাবে এবং ক্ষতি ততটা হবে না।
সিলেটে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
সিলেটের প্রধান নদী সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের বরাক নদী দিয়ে বয়ে আসা ঢলে সীমান্ত উপজেলা কানাইঘাটে সুরমার পানি গতকাল সোমবার আরো বেড়েছে। তবে কানাইঘাটে সুরমা বিপত্সীমার দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার, সিলেটে দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কানাইঘটে ৭৮ মিলিমিটার ও সিলেটে ৩১৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার, ছাতকে ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
সুনামগঞ্জের হাওরে পর্যটক আসতে মানা
এদিকে সিলেটের পর্যটন স্পট সাদা পাথর এলাকায় রবিবার অপরাহ্নে নিখোঁজ পর্যটকের সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনো। সাদাপাথরে বেড়াতে গিয়ে আবদুস সালাম (২৩) নামের এক পর্যটক রবিবার দুপুরে নিখোঁজ হন। সালাম ঢাকা মিরপুর-১১ এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে।
সালামের সঙ্গে বেড়াতে আসা শাহীন জানান, মিরপুর থেকে তারা ছয় জন সাদাপাথর বেড়াতে এসেছিলেন। সেখানে সাঁতার কাটতে গিয়ে প্রবল স্রোতের টানে আবদুস সালাম নিখোঁজ হন। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের আসতে বারণ করেছেন।
হাওরের ঢেউ বাড়িঘরে আছড়ে পড়ছে দোয়ারবাজার উপজেলা সংবাদদাতা মামুন মুন্সি জানান, সেখানে প্রচণ্ড পানির চাপ। অনেক স্থানে হাওরের ঢেউ বাড়িঘরে আছড়ে পড়ছে। ঘরের মালিক ঘর ছেড়ে অন্যত্র উঠেছেন। তবে ঘরের ভিটা রক্ষার জন্য বরান্দায় আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মধ্যেই বস্তা চাটাই দিয়েছেন। কে জানে ঘরগুলো শেষ রক্ষা হবে কি না। দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার নরসিংপুর সড়কের ব্রিটিশ সড়ক, দোয়ারাবাজার -বোগলাবাজার সড়কের শরীফপুর, দোয়ারাবাজার-নৈনগাও সড়কের মাঝেরগাও হাসপাতাল সড়ক, লক্ষ্মীপুর-মহব্বতপুর সড়কের রাবারড্যাম্প এলাকাসহ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে : বাংলাবাজার, নরসিংপুর,লক্ষ্মীপুর, সুরমা ও বোগলাবাজার ইউনিয়ন। ১৫টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার পাঁচটি খাল উদ্ধারের দাবি
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ভেতরের পাঁচটি খাল অবৈধ দখলকারীদের কবলে থাকায় পানি নিষ্কাশনে মারাত্মক সমস্যা চলছে গত কয়েক বছর থেকে। এলাকাবাসী খালগুলো উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।