আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতির পরিমাণও কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৭৬০ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে করে ১ হাজার ৭১৬ কোটি ২০ লাখ (১৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার হিসেবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করায় দেশে আমদানি নিয়ন্ত্রণ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া ডলারসংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কিছুটা কমেছে। তবে এলসির হার কমলেও আগের আমদানি দায় পরিশোধের চাপ ছিল। একই সঙ্গে আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। যার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় হচ্ছে বেশি। ফলে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তার আগের অর্থবছরে বিক্রি করা হয় আরো ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির কারণে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। সবশেষ ২৫ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারে।
সবশেষ তথ্য বলছে, অর্থবছরের ১১ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি ৮০ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল এক হাজার ৭২৭ কোটি ডলার। সামগ্রিক লেনদেনেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের মে পর্যন্ত সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮০ কোটি ডলার। এ সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ৫৫৯ কোটি ডলার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ১ হাজার ৯৪১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৯১৯ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এফডিআই বেড়েছে ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ : দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সামান্য বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-মে সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ৪২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। গেল অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৪৬২ কোটি ডলারে উঠেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ কমে ১৬৩ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৭৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।