বিদায়ি অর্থবছর জুড়ে মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ আর ডলার-সংকট ছিল দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। নতুন অর্থবছরও শুরু হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতির তথ্য দিয়েই। ২০২২-২৩ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ, যা বছরওয়ারি হিসাবে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। গেল জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ তাদের জীবনযাপন করতে হিমশিম খাচ্ছে। এবার শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচনি বছর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি কমে আসবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো কঠিন হবে। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নির্বাচনেও প্রভাব পড়বে। তাই চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে সরকারের জন্য।
মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বকেই ভুগিয়েছে। বিভিন্ন দেশে সামাজিক অস্থিরতাও হতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে। তবে বাংলাদেশে এর প্রভাব খুব সামান্যই। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, নির্বাচনি বছরে দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে যেসব সংকট আছে সেগুলোই বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে নির্বাচনি বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। আরেকটি হচ্ছে, সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। যেমন রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ এখন যে পজিশনে আছে, সেটা স্বস্তিদায়ক নয়। এই দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য মুদ্রানীতিতে যে পলিসি নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সুদহারের ব্যাপার মুদ্রার বিনিময় হার ইত্যাদি বিষয় কীভাবে কার্যকর হয়, তা দেখার বিষয় রয়েছে।
আরেক অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনি বছরে অর্থনীতিতে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ যেভাবে পতনের দিকে গেছে, একে ঠেকাতে হবে। যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে, টাকার দরপতন হচ্ছে, এসব নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীল করতে হবে। এসব হচ্ছে নির্বাচনি বছরের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারলে মানুষ স্বস্তিতে থাকবে না। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে যেভাবে রেমিট্যান্স আসছে এটিকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। ফরমাল চ্যানেলে যাতে রেমিট্যান্স আসে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই অর্থনীতির সংকট কেটে যাবে।