নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, আইন যদি প্রার্থীর কোন কর্মীও ভঙ্গ করে, তাহলে তা প্রার্থীর ওপরেই বর্তায়। অতি উৎসাহী কর্মীদের যদি প্রার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে সেই প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে কীভাবে জনগণের সেবা করবে।
ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচরন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টায় উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন অডিটরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ইসি আহসান হাবিব খান বলেন,নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচনে সুন্দর প্লাটফর্ম তৈরি করা। ভান্ডারিয়ায় আগে যখন এসেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো স্বর্গের শহর, এখানে এক পাত্রে পানি রাখলে নড়ে না। কিন্তু বর্তমানে এসে তা মনে হচ্ছে না। উপজেলায় পৌঁছানোর আগেই পোস্টার ও লিফলেটসহ আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখেছি।
তিনি বলেন, ছোট ছোট করেই অন্যায় বড় হয়। ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনকে আমরা মডেল নির্বাচন করতে চাই।
মতবিনিময় সভায় মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নানা অভিযোগ শোনেন নির্বাচন কমিশনার। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
প্রার্থীদের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান আহসান হাবিব। প্রার্থীদের বক্তব্য যদি সঠিক হয় তাহলে তা গর্হিত কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসি সচিত্র ছবি কিংবা ভিডিওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাতে বলেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেন।
ইসি বলেন, সিসিক্যামেরার মাধ্যমে বুথের মধ্যে ও ভোটকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। কেউ কোন অসাধু কার্যক্রম করলে প্রয়োজনে একবার নয়, দশবার নির্বাচন করা হবে। কিন্তু স্বচ্ছতার বিষয়ে কোন আপোষ নেই।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপারসহ প্রার্থী ও ভোটারদের সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টি জেপি’র বাইসাইকেল প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী মো. মাহিবুল হোসেন মাহিম, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. ফাইজুর রশিদ খসরু, স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ রাজ্জাক রাজু এবং শাহাবুদ্দিন শাহ বাবুল বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী, পেশিশক্তি প্রদর্শন, নির্বাচনী কার্যক্রমে বাধা দানসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন।
এছাড়া ৯টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৩ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন, অধিক অর্থ ব্যয়সহ নানা অভিযোগ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকলকে সঙ্গে নিয়ে ভান্ডারিয়ায় মডেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজকে থেকে কোন গ্যাপ নেই।
নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউর রহমান প্রার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আজকে থেকে দেখতে পারবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম। কারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এছাড়া বহিরাগত, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আজ থেকেই কঠোর অভিযান চলবে। অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে সাঁড়াশি অভিযানও পরিচালিত হবে। নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোন বহিরাগত নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করতে পারবে না।
জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খলিফা বলেন, বার বার বলা সত্ত্বেও আচরণবিধি যারা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, নির্বাচন হবে সোজা। এটাকে কেউ বাঁকা চোখে দেখবেন না। একটা পৌরসভা নির্বাচনকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশনার নিজে এসেছেন। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনে যেখানে বাধা আসবে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।