বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ভারতে গ্রেফতার প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে জেরায় বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) জেরায় পি কে হালদার এসব প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার বা সে দেশের কোনো তদন্তকারী এজেন্সির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি করেছে ইডি। সে ক্ষেত্রে পি কে হালদারকে শিগগিরই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না।
ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। তদন্তের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জেরায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে। ওই প্রভাবশালীরা কোন দেশের নাগরিক প্রশ্ন করা হলে এ আইনজীবী বলেন, ‘এ মুহূর্তে ভারতীয় প্রভাবশালীদের নাম নিয়েই আমরা চিন্তিত। বাংলাদেশের নাম এলেও এ মামলায় তাদের নাম নেই।’ পি কে হালদারকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বা তদন্তকারী এজেন্সিগুলোর তরফে ইডি বা আমাদের কাউকে কিছু জানানো হয়নি।’
এদিকে ইডির হাতে গ্রেফতার পি কে হালদার ওরফে শিবশঙ্কর হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে ১৫ দিনের জেল হেফাজত দিয়েছেন কলকাতার নগর দায়রা আদালত। সে ক্ষেত্রে ২০ জুলাই ফের তাদের আদালতে তোলা হবে।
১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে গতকাল অভিযুক্ত প্রত্যেককেই কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিশেষ সিবিআই কোর্ট-৩-এ তোলা হলে বিচারক জীবন কুমার সাধু এ নির্দেশ দেন। এই সময়কালে প্রয়োজনে নতুন নতুন তথ্য পেতে কারাগারে গিয়েও অভিযুক্তদের জেরা করবেন ইডির কর্মকর্তারা। পি কের ভাই প্রাণেশ হালদারের জামিনের যে আবেদন আদালতে করা হয়েছিল, এদিন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অন্যদিকে বাকি পাঁচ অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। এদিকে ইডি সূত্রের খবর, কয়েক দিনের মধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারে তারা। আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘আদালতে এদিন পি কের ভাই প্রাণেশ হালদারের আগাম জামিন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অন্যদিকে বাকিদের জামিন খারিজ করে দেন আদালত।’ উল্লেখ্য, ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালায় পি কে হালদারের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে।
ইতোমধ্যে পি কে হালদারসহ গ্রেফতার ছয়জনের বিরুদ্ধে প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট এবং দ্য প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। অন্যদিকে মহিলা অভিযুক্ত রয়েছেন আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে। অভিযুক্তদের জেরায় ইতোমধ্যে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক শহরে।
এদিকে ওই মামলায় পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী স্বপন মৈত্রের স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রকে জেরা করেছেন ইডির কর্মকর্তারা। বুধবার ইডির পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন পূর্ণিমা মৈত্র। টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জেরা করা হয় বাংলাদেশের দুদকের এজাহারভুক্ত আসামি পূর্ণিমা মৈত্রকে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পূর্ণিমার পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাংকের পাস বই, ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কিত নথি, বারাসাতে থাকা তাদের একটি ফ্ল্যাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ একাধিক নথিপত্র। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারের সঙ্গে পূর্ণিমার আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, থাকলেও তা কোন পর্যায়ের, পূর্ণিমার নাগরিকত্ব- মূলত এসবই খতিয়ে দেখতে চান ইডির কর্মকর্তারা। আজ ফের ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পূর্ণিমাকে। অর্থ পাচার-সংক্রান্ত মামলায় ইডির কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছেন পি কে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধার বড় মেয়ে অতসী মৃধা এবং তার স্বামী সঞ্জীব হাওলাদারও। গত সপ্তাহে তাদেরও পৃথকভাবে জেরা করেন ইডির তদন্ত কর্মকর্তারা।