জাতীয় পার্টি-জেপির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কারাগারে রেখেই ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার নির্বাচন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রের কমবেশি প্রত্যেকটিতেই দেখা গেছে অবৈধ এজেন্ট। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের দিন পর্যন্ত কয়েক দিন ধরে কালোটাকা ও পেশিশক্তির অবাধ ব্যবহার ছিল প্রকাশ্য। এমন ভোটের ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী ফাইজুর রশিদ খসরু ৯ হাজার ৬২৫ ভোট পেয়ে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপি মনোনীত ‘বাইসাইকেল’ প্রতীকের প্রার্থী মাহিবুল হোসেন মাহিম।
বাইসাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী মাহিম অভিযোগ করেন, পূর্ব থেকেই পরিকল্পিতভাবে তাদের মূল দলের এবং অঙ্গ-সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে জেপির নেতাকর্মীরা প্রচারণায় অংশ নিতে না পারেন, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা জেপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তালুকদার, জাতীয় যুব সংহতির উপজেলা সভাপতি রেজাউল হক রেজভী জোমাদ্দার, যুব সংহতি নেতা মো. মাসুদ সরদার, মো. মঞ্জু সরদার, জাতীয় ছাত্র সমাজের উপজেলা সভাপতি মো. জাহিদ সরদার, সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব শরীফ শুভ, যুব সংহতির নেতা মো. সাগর তালুকদার, মো. মনির মাতুব্বর, মো. লিটন হাওলাদার, মো. সাইয়েদকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তারা এখনো কারাবন্দি আছেন।
জেপি প্রার্থীর অভিযোগ, যে সব কর্মী বাইসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের হত্যাসহ এলাকা ত্যাগের হুমকিধমকি দেওয়া হয়েছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। মাহিম বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনের দিনেও ক্ষমতাসীনরা অহরহ আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনি বিধি ভঙ্গের বিষয়টি বারবার লিখিত ও মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভোটের দিনেও ফ্রি স্টাইলে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার দেখিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন।
গতকাল ভোটের দিন ৯টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করা হচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে পেশিশক্তি প্রদর্শন করেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিহারী লাল মৈত্র পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দর গার্লস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৭৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৭৬ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম অবৈধভাবে কেন্দ্রের ভেতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করে ভোটের মাঠে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন।
একদিকে, কেন্দ্রের ভেতরে মিরাজের অবস্থান, অন্যদিকে বাইরে তার লোকজন নানা হুমকিধমকি দিয়ে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করেছে। যদিও ভোটের কয়েক দিন আগ থেকেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে মাদক কারবারের অবৈধ টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা। ভোটের দিনেও ভোটারসহ কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের মধ্যে টাকা ছড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের চিত্র দেখা গেছে। কেন্দ্রের মধ্যে অসংখ্য নেতাকর্মীর পাশাপাশি এক জন এজেন্টের পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ জন এজেন্টের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ভোটের লাইনসহ কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে ভোটের পরিবেশকে পক্ষে নেওয়ার চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও বিশেষ কাগজ ধরিয়ে দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে অর্ধেক টাকা দিয়ে পরবর্তী সময় ভোট শেষে তাদের কাগজ জমা দিয়ে বাকি টাকা ও আইডি কার্ড নিয়ে যাওয়ার জন্য এক জন যুবককে কাজ করতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি দেখা গেলেও এসব অনিয়মের বিষয়ে তাদের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ বিষয়ে স্থির চিত্র ও ভিডিওচিত্র সংশ্লিষ্টদের দেখালেও তারা তা এড়িয়ে যান। অনেক কেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবিপ্রাপ্তদের বসার জন্য চেয়ার এনে সঙ্গে বসে খোশগল্প করতে। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকিধমকির বিষয়ে কিংবা বাইসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর গাড়ির সামনে জড়ো হয়ে নানান কটূক্তি ও স্লোগান দিলেও তাতে কর্ণপাত করেননি দায়িত্বশীলরা।
গতকাল অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। তিনি এদিন দুপুর ১২টায় মজিদা বেগম মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই নির্বাচনে তার দলের প্রার্থী জিতলেও সন্তুষ্ট, হারলেও সন্তুষ্ট। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ বলেও মনে করেন তিনি।