পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পৃথিবীর বড় অংশে যখন কর্তৃত্বপরায়ণতার উন্মেষ ঘটেছে, এর বিপরীতে তখন মিয়ানমারের মানুষ সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। এই সংগ্রামের সঙ্গে মিলে যায় গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাও।
প্রায় তিন দশকের স্থগিতাদেশ শেষে এক বছর আগে মিয়ানমারে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি হয়। যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ইইউভিপির প্রাক্তনী ফিও জিয়া থো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে থাকা তরুণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকর্মী, যিনি কো জিমি নামে সুপরিচিত, তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গত এক বছরে নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি এই অবজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও উপাসনালয়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। জান্তাদের এমন এক হামলায় গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৭০ জন নিহত হন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মিয়ানমারের শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত সময় পার করেছে। বয়োবৃদ্ধদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ষণকে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ট্যাংক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটা সম্ভাব্য গণতন্ত্র, অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভঙ্গুর কিন্তু অগ্রগতির পথে এগোনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। সেই সময় থেকে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন ৩ হাজার ৮০০ মানুষ। তারা ৭০ হাজার সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই হিসাবে মিয়ানমারের জান্তাদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বেঅন্তত১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শুধু গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ খেতে পান না। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোয় চীনের পরই মিয়ানমারের অবস্থান। রাজবন্দীদের সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ প্রায় ২০ হাজার ছুঁয়েছে।
তারপরও মিয়ানমারের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশের বৈধ সরকার হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এখনো মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রজ্বলিত রেখেছে। বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধিত্বশীল সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জান্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
বাস্তবিকভাবেই অথবা সম্ভবত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মানুষ জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়কে উপেক্ষা করে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের স্বৈরশাসনের অবসান চাইছেন।
যখন গণতন্ত্রের প্রধান সমর্থক ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখনো সেনাশাসকদের কাছে অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা যায়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তারা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতই যে কেবল মিয়ানমারের এই দুর্দশা থেকে লাভবান হচ্ছে তা–ই নয়, জান্তার এই নৃশংসতা থেকে ফায়দা উঠিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠান।
বাইডেন প্রশাসন গত মাসে মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বৃহৎ দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখনই সময় ইইউর উচিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। কারণ, তারা জান্তাদের যুদ্ধাপরাধে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের ছায়া বেসামরিক সরকারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এনইউজি একটি নতুন সংবিধান এবং প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি যেন সংকট উত্তরণে ক্ষমতায়িত হতে পারে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই উপযুক্ত সময়। স্থানীয় সরকার কাঠামো, সুশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন, সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নিরস্ত্র সহযোগিতা এবং এনইউজি ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ আয়োজন জান্তাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার নারী ও অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। এনইউজিকে অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
এনইউজির শীর্ষ মন্ত্রীদের ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য শহরে স্বাগত জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে এখনো এনইউজি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রকামী সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অনেক দেশই নিরুত্তর।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজকে চলমান সহিংসতা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। যদিও এটা স্বীকার করতেই হবে যে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ান যে পাঁচ দফা নীতিতে একমত হয়েছিল, তাতে পাত্তাই দেয়নি জান্তা।
এখন পর্যন্ত সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১০০টি বৈঠক হয়েছে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০২২ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসহ আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করায় সামরিক জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।