ক্রমে বিরূপ হয়ে উঠছে আবহাওয়া। গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির আবর্তে পড়ছে জনজীবন-পরিবেশ-প্রকৃতি। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রতি বছর আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে বাংলাদেশের পরিবেশ ও আর্থসামাজিক অবস্থা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। আষাঢ় অতিক্রান্ত হয়ে এখন মধ্য শ্রাবণ পেরুলেও বর্ষার ঘনঘোর ধুমল দিন দেখতে পায়নি বাংলাদেশ। বৃষ্টির দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এই বর্ষাকালেও তাপমাত্রা বাড়ছে আর কমছে বারিধারা।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) আবহাওয়া অধিদপ্তরের চলতি আগস্ট মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বর্ষাকালে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বাংলাদেশে জুলাই মাসে গড়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় প্রতি বছর। এর পরিমাণ ৫২৩ মিলিমিটার। কিন্তু এবার স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। একমাত্র সিলেট বাদে দেশের সব বিভাগে জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপর আছে বরিশাল বিভাগ। ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় ৪৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা বর্ষা মৌসুমের সময় তাতানো রোদের এমন চিত্র বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খুব একটা দেখা যায় না। শ্রাবণের শেষ পক্ষে এ সময় দেশের প্রচলিত আবহাওয়ার নিয়মানুসারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খেত, জলাশয়, পুকুর পানিতে থইথই করার কথা। অথচ এখন বইছে যেন চৈত্র মাসের তাপমাত্রা। বৃষ্টি হালকা হলেও সেই পানিতে ডুবছে না ঘাসও। বৃষ্টির এ বৈশিষ্ট্য বর্ষাকালে বড় অচেনা।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, চলতি আগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সে বৃষ্টিতে তাপমাত্রা খুব একটা না-ও কমতে পারে। হালকা বৃষ্টির কারণে মাটি থেকে একধরনের গরম বের হচ্ছে। এতে গরমের অনুভূতি আরও বেড়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি ছাড়া এই গরম কমবে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ২ দশমিক ৪ এবং ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর দেশের গড় তাপমাত্রা বেশি ছিল ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মাসেও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বের পার্বত্য এলাকার কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে গভীর নিম্নচাপ: এদিকে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাগরে সৃষ্ট মৌসুমি গভীর নিম্নচাপ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে খেপুপাড়ার পাশ দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ সাগর উত্তাল থাকায় দেশের চারটি সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে আজ এবং আগামীকাল উপকূল ভাগসহ সারা দেশে কম-বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।