জুন মাসে চীনের ব্যবসা কেন্দ্র সাংহাই থেকে বুলেট ট্রেনে রওনা হয়ে যাত্রীরা রাজধানী বেইজিং যেতে পারেননি।
অর্ধেক পথ যাওয়ার পর পিপিই পরা সরকারি কর্মকর্তারা ট্রেনে উঠে হাত-মাইকে ঘোষণা দেন যে সব যাত্রীকে ট্রেন থেকে নেমে যেতে হবে, কারণ যাত্রীদের মধ্যে একজন কোভিডে সংক্রমিত কিছু মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
কোভিড মহামারির প্রথম দিকে কড়াকড়ি নিয়ে চীনের মানুষজন কোনো আপত্তি করেনি, কারণ তারা মনে করেছে সরকার যা করছে তাদের ভালোর জন্যই করছে।
কিন্তু গত মাসে বেইজিংগামী ঐ ট্রেনের যাত্রীরা ক্ষেপে ওঠেন। তাদের কথা ছিল-“না! কেন নামবো? কেন তোমরা এমন একটা লোককে ট্রেনে উঠতে দিলে?”
কিন্তু সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি। কয়েক’শ মাইল দূরে তাদের সবাইকে সরকারি একটি আইসোলেশন কেন্দ্রে নিয়ে ওঠানো হয়।
চীন এখনও আপসহীন “জিরো কোভিড” নীতি অনুসরণ করে চলেছে, এবং এখনও সংক্রমণ আটকাতে চরম কড়াকড়ি করছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট বারবার বলেছেন, অন্য কোনো পথ চলবে না।
উহানে প্রথম কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো চীনকে বিশালাকৃতির একটি সুরক্ষা বুদবুদের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে, সারা পৃথিবীতে যখন প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছিল, চীনে দখন মৃত্যুর হার ছিল অপেক্ষাকৃত অনেক কম।
কিন্তু অতিরিক্ত এই সুরক্ষা নীতির মূল্য দিতে হচ্ছে চীনকে। শুধু অর্থনৈতিক মূল্যই নয়, রাজনীতির জন্যও হুমকি বাড়ছে।
চীনে কম্যুনিস্ট পার্টির সবচেয়ে বেশি ভয় বড় কোনো জন অসন্তোষকে। এ বছরের শেষে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টি কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা চাইবেন। ফলে, এখন যেকোনো ধরণের জন-অসন্তোষ তার জন্য বিশাল মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বাকি বিশ্ব যখন কোভিডের সাথে খাপ খাইয়ে চলার নীতি অনুসরণ করছে, শুধুমাত্র চীন এখনও বিশ্বের একমাত্র বড় অর্থনীতি যাদের কাছে এখনও কোভিড নিয়ন্ত্রণ অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের ‘জিরো কোভিড’ নীতির আওতায় এখনও এলাকা ধরে মানুষকে পরীক্ষা করা হয়, কোনো রোগীর সংস্পর্শে আসা সবার ওপর নজর রাখা হয় এবং প্রয়োজনবোধ করলে মানুষকে কড়া আইসোলেশনে রাখা হয়।
দু-চারটি সংক্রমণের খবরে এখনও শহর ধরে লক-ডাউন আরোপ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানী বেইজিংয়ে মাত্র গুটিকয়েক সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর শহরের দুই কোটি ১০ লাখ মানুষকে দোকানে বা অন্য পাবলিক ভবনে ঢোকার জন্য তিন দিন পরপর পিসিআর পরীক্ষা করতে হয়েছে।
কোনো একটি মহল্লায় একটি কোভিড সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে পুরো মহল্লায় লকডাউন দেয়া হচ্ছে।
ফলে, সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে ছোটো ব্যবসা – দোকান, বার, রেস্তরাঁ। অনেক জায়গায় এসব অনেক দোকান পরে আর খুলছেই না। পাকিপাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
চীনে এখন সবাই এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। আগাম কোনো পরিকল্পনা তারা করতে পারছেনা। সবাই বিরক্ত যে আর কতদিন এভাবে চলবে।
এ নিয়ে যদি চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির উদ্বেগ এখনও না থকে, তাহলেও তাদের উচিৎ এখনই তা নিয়ে ভাবা।
সাংহাইতে যদি মানুষজনকে আরো একবার ঘরের ভেতর আটকে রাখা হয়, তাহলে দাঙ্গা বেঁধে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
কিন্তু এই ঝুঁকি স্বত্বেও চীনা সরকার তাদের কোভিড নীতি বদলের কোনো ইঙ্গিতই দিচ্ছেনা।
বাকি বিশ্ব বিস্ময়ে তা দেখছে, এবং ভাবছে – কেন চীন এপথে হাঁটছে?
এটা পরিষ্কার নয় কেন চীন তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের গতি কমিয়ে দেয় যেখানে এমনিতেই এখনও তাদের ভ্যাকসিন নেয়া জনসংখ্যার হার কম।
সে কারণেই সরকার ভয় পাচ্ছে সংক্রমণ আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে হাসপাতালে জায়গা দেয়া যাবে না এবং প্রচুর মানুষ মারা যাবে।
“বয়স্ক বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এমন অনেক মানুষকে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেয়া হয়নি। সুতরাং আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারিনা,” মার্চ মাসে তার এক বক্তব্যে বলেন চীনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্য প্রফেসর লিয়াং ওয়ানিয়ান।
তবে দেরিতে হলেও খুব সম্প্রতি চীনে ভ্যাকসিন কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে – ৮৯ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রাপ্য জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫৬ শতাংশ বুস্টার ডোজ পেয়েছে।
হালে চিত্র কিছুটা ভালো হলেও কমাস আগেও তা অনেক খারাপ ছিল। বিশেষ করে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্যাকসিনের হার ছিল উদ্বেগজনক। হংকং-এ কোভিডে মৃতদের সিংহভাগই ছিল বয়স্ক এবং ভ্যাকসিন না নেয়া মানুষ।
সাংহাইতে এপ্রিলে কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর নগর কর্মকর্তারা জানান, ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সীদের মাত্র ৩৮ শতাংশ তিন ডোজ টিকা নিয়েছে বা পেয়েছে, এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মাত্র ১৫ শতাংশের দুই ডোজ টিকা নেওয়া আছে।
সারা দেশের চিত্রও একই রকম। যেমন, ৮০ বছর বা তার ঊর্ধ্ব বয়সীদের মাত্র ১৯.৭ শতাংশ বুস্টার ডোজ নিয়েছে।
কেন টিকা নিয়ে এই গড়িমসি? চীনে আনেকে মনে করনে, অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আসার আগ পর্যন্ত সরকার কোভিডকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে, ফলে ভ্যাকসিনের ওপর গুরুত্ব কমে যায়।
সরকারি কর্মকর্তারা কোভিডকে বাইরের বিশ্বের একটি সংকট হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কোভিড ছড়ানোর জন্য তারা বিদেশ থেকে আসা লোকজনকেই প্রধানত দায়ী করছেন। ফলে চীনে এটাই সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অনেক মানুষ বলেছেন, কিছু চিকিৎসক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা এবং বয়স্ক মানুষদের ভ্যাকসিন না নেয়ার বিপদের চেয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
বেইজিংয়ের মানুষরা কোভিড ভাইরাস নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন।
“আমি কোভিড নিয়ে খুব ভাবছি না। একটু সাবধানে থাকছি, মাস্ক পরছি” বলেন ৮৫ বছরের এক নারী। তিনি জানান, তিনি এবং তার স্বামী মাত্র সেদিন সকালে এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
কাছেই আরেকজন বলেন, “বেইজিংয়ে কোভিড ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। বেইজিংয়ের মানুষ, চীনের মানুষ সরকারের কথা শোনে। তারা বাইরের দেশগুলোর মানুষদের মত নয়। সরকার যখন ঘরের মধ্যে থাকতে বলে, আমরা ঘরে থাকি।”
কিন্তু সাংহাই, উহান, শিয়ান, জিলিনের মত অন্য অনেক শহরে যে মাত্রার লকডাউন দেয়া হয়, তেমন সর্বাত্মক লকডাউন বেইজিংয়ে এখনও দেখা যায়নি। বেইজিংয়ের মানুষজন বিশ্বাস করেন বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের শহরগুলোতে কোভিড নিয়ে যে দুর্যোগ দেখা গেছে সে তুলনায় তাদের শহরের অবস্থা অনেক ভালো।
চীনের সরকারি মিডিয়াতে বাইরের দেশের কোভিড পরিস্থিতি ব্যপকভাবে প্রচার করা হয়। কিন্তু চীনের ভেতর কোভিড বিধিনিষেধের কারণে বহু মানুষকে যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তার সঠিক চিত্র চীনের মিডিয়ায় আসেনা। সাংহাইতে লকডাউনের সময় মানুষকে খাবারের অভাবেও ভুগতে হয়েছে।
ভ্রমণের সময় পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক, কিন্তু ভ্যাকসিন রেকর্ড কেন বাধ্যতামূলক করা হয়নি?
চীনে বেশ কটি বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে টেস্টিং এবং লক-ডাউন কার্যকর করার পেছনে এত পয়সা খরচ না করে দীর্ঘমেয়াদী ভ্যাকসিন কৌশলে তহবিল দেয়া উচিৎ।
গত সপ্তাহে, বেইজিংয়ের নগর কর্তৃপক্ষ একটি পরিবর্তনের ঘোষণা করে: সিনেমা, জিম, ইন্টারনেট ক্যাফে, লাইব্রেরি, যাদুঘর এবং এমন অনেক জায়গায় ঢুকতে গেলে ভ্যাকসিনের প্রমাণ দেখাতে হবে। কিন্তু দু’দিন পরই সরকারি মিডিয়ার খবর দেয়া হয়, ভ্যাকসিন রেকর্ড দেখানো বাধ্যতামূলক নয়।
কিন্তু ভ্যাকসিন কার্যক্রম সমস্যার একটি মাত্র দিক। জিরো কোভিড একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমস্যার অন্যতম কারণ, সরকারি কর্মকর্তারা কম্যুনিস্ট পার্টির প্রচারণার ওপর খুব বেশি আস্থা রেখেছেন।
অন্যান্য দেশ যখন বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়, চীনা সরকারি কর্মকর্তারা তা নিয়ে সমালোচনা শুরু করে দেন। তারা বলেন, চীনে কখনো এটা হবেনা।
জুন মাসে প্রেসিডেন্ট শি উহানে এক সফরে যান যে শহর থেকে কোভিড মহামারির সূচনা হয়েছিল। সরকারি মিডিয়ার খবর বলা হয়, মি. শি সেখানে গিয়ে ‘জিরো কেভিড নীতি’ জোরদার করার কথা বলেন। স্থানীয় মানুষদের তিনি বলেন, মানুষ এবং মানুষের জীবন তার সরকারের কাছে এক নম্বর অগ্রাধিকার।
তাকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন খবরে বলা হয় চীন যদি এখন ‘হার্ড ইম্যুনিটির’ (জনসংখ্যার ভেতর ভাইরাস প্রতিরোধী শক্তি) পথে যায়, তাহলে তার পরিণতি ‘অকল্পনীয়’ হতে পারে।
যেখানে কোভিডের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব বলে প্রমাণিত হচ্ছে, সেখানে চীনের ক্ষমতার শীর্ষ থেকে এই ভাইরাসকে ‘পরাজিত’ এবং মহামারির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে বিজয়ের’ কথা বলা হচ্ছে।
ফলে, চীনের অনেক মানুষ বিশ্বাস করে চেষ্টা করলে এই ভাইরাস নির্মূল করা সম্ভব।
চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির আগামী কংগ্রেস যদি আর কয়েক বছর পর হতো, তাহলে এই সংকট সরকারের জন্য ততটা মাথা-ব্যথার কারণ হতোনা। কিন্তু পার্টি কংগ্রেস আর মাত্র ক’মাস বাদে এবং সেখানে মি. শি তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকার অনুমোদন চাইবেন।
বড় জোর দু’দফা ক্ষমতার বিধান প্রণয়ন করেছিলেন সাবেক নেতা দাং শাওপিং। লক্ষ্য ছিল, মাও জে দংয়ের মত আর যেন কেউ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকতে পারেন।
কিন্তু ইতোমধ্যেই সেই বিধান তুলে দেয়া হয়েছে যাতে মি. শি যতদিন ইচ্ছা ক্ষমতায় থাকতে পারেন।
চীনের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। চেয়ারম্যান মাওয়ের মত চেয়ারম্যান শি যদি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চান, তাকে আটকানোর তেমন সহজ কোনো পথ এখন আর নেই।
মি. শির প্রস্থানের জন্য আর কী কী প্রয়োজন:
- একটি রাজনৈতিক যন্ত্র (যেমন, পার্টি কংগ্রেস)
- জরুরি অবস্থা (যেমন, প্যানডেমিকের জেরে অর্থনীতিতে চরম সংকট)
- সংকটের মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতা
- দলের যথেষ্ট সংখ্যক সিনিয়র সদস্য যদি এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে মি. শির বিরোধিতা করার যে ঝুঁকি তার চেয়ে তাকে ক্ষমতায় রাখার ঝুঁকি বেশি।
সর্বশেষ যে সম্ভাবনাটির কথা তুলে ধরা হলো তেমনটি ঘটার সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে। তবে চীনা নেতা এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা সবসময় সতর্ক থাকেন পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই ততটা খারাপ না দাঁড়ায়।
মে মাসে কম্যুনিস্ট পার্টির অত্যন্ত ক্ষমতাধর সাত-সদস্যের পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটি এক বিবৃতিতে বলে, “আমাদের মহামারি রোধের নীতি নিয়ে যে কোন সন্দেহ, আপত্তি” দূর করার দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বোঝাই যায়, ‘জিরো কোভিড’ নীতি নিয়ে চীনের শীর্ষ মহলেও সন্দেহ-কথাবার্তা রয়েছে। কারণ তা না হলে, পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে শব্দটি ব্যবহারই হতোনা।
চীনে ক্ষমতার শীর্ষ স্তরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রশ্নই তোলা হয়না – এমনটা ভাবার কারণ নেই।
কয়েক প্রজন্ম ধরে, চীনাদের কাছে অর্থনীতি এক নম্বর অগ্রাধিকার, এবং কোভিড সেই অর্থনীতিকে বিপদগ্রস্ত করছে।
অনেক অর্থনীতিবিদ এখন সন্দেহ করছেন, কোভিডের সত্যিকারের প্রভাব এবং সেইসাথে এই ভাইরাস আটকানোর কৌশলের দুর্বলতা আড়াল করতে সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে খেলা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রধানত কোভিডের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং লক-ডাউনের পরিণতিতে ২০২২ সালে চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৪.৩ শতাংশ।
কিন্তু পার্টি কংগ্রেসের আগে জিরো কোভিড নীতি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রেসিডেন্ট শি দেরি করে ফেলেছেন। তাকে এখন আশায় থাকতে হবে যে নতুন দফা ক্ষমতার মেয়াদের আগে সাংহাইয়ের মত শহর জুড়ে লকডাউন তাকে যেন না দিতে হয়।
যেসব শহরে এমন দীর্ঘ সময়ের জন্য এবং বার বার লকডাউন দেওয়া হয়েছে, সেসব জায়গায় কোভিড নিয়ে ক্লান্তি স্পষ্ট।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশার প্রবণতা বাড়ছে। চীনের মত দেশে বিষয়টি খুব স্বাভাবিক নয়। সাংহাইতে লকডাউন চলার সময় যখন খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় তখন মানুষজন লা মিজারাব থিয়েটারের ‘তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো যে মানুষ গান গাইছে?’ – এই ক্লিপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে শুরু করে।
তার অর্থ এই নয় যে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা এখনই উঠে যাচ্ছে তবে যে সরকার একসময় কোভিড নিয়ন্ত্রণে সুনাম অর্জন করেছিল, তাদের জন্য এ ধরনের সমালোচনা চপেটাঘাতের মতো।
সপ্তাহ-খানেক আগে যখন কম্যুনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি বলেন যে জিরো কোভিড নীতি আরো অন্তত পাঁচ বছর চলবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে।
সাথে সাথেই সরকার সংশোধনী জারি করে বলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেই সাথেআরেকটি ঘোষণায় বলা হয় বিদেশ থেকে আসার পর কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়সীমা কমিয়ে হোটেলে সাত দিন এবং ঘরে তিন দিন করা হলো।
বোঝাই যায় মানুষকে একটি বার্তা দেয়া হয় যে সরকার কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল করছে।
কিন্তু অনেক মানুষ মনে করছেন, চীন অসম্ভবকে সম্ভব করার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলেছে এবং একসময় না একসময় বাস্তবতা তাদেরকে মেনে নিতে হবে।
সম্ভাব্য একটি পথ হয়তো তাদের রয়েছে – জিরো কোভিড নীতির ভিন্ন একটি সংজ্ঞা তৈরি করে কোভিডের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করা।
কিন্তু তার আগ পর্যন্ত থেকে থেকেই সরকারকে সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। তবে, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাক – কম্যুনিস্ট পার্টি কখনই তা চাইবে না।