বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় দুই বছরের মধ্যে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। বর্তমানে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। গত বছরের ডিসেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
আজ মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
ঈদের ছুটির আগে ৭ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে সমন্বয়ের পর রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
আকু হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আঞ্চলিক লেনদেনের জন্য আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এর সদস্য। এই ব্যবস্থায় দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে আমদানি পণ্যের বাড়তি দাম দিতে গিয়ে চাপ পড়ছে রিজার্ভে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কাটাতে সদ্যোবিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরও স্বাভাবিক হচ্ছে না মুদ্রাবাজার। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ১০ লাখ (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে তুলে নিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এর পরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর। আর প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে টাকা।
রপ্তানি আয়ের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমে যাওয়ার ফলে ডলারের ওপর চাপ তৈরি হওয়ায় রিজার্ভে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের মজুদ চাপে আছে বলেও জানান তারা।
গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাসের মধ্যে আমদানি ব্যয় ৩৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় রপ্তানি আয় ৩৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবার রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। গত অর্থবছরে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোয় রেমিট্যান্স আসে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার।