বিজ্ঞপ্তিতে যেসব যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করতে বলা হয়েছিল, তার প্রতিটি শর্ত ভঙ্গ করে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই শিক্ষকের নাম মো. নকিবুল হাসান খান। আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও ছয় বছরের বেশি সময় তিনি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক!
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিতে দেখা যায়, শিক্ষক পদে আবেদন করতে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে) ফল থাকতে হবে। সেই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থাকতে হবে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে)। বিশেষ যোগ্যতার ক্ষেত্রে যে কোনো একটি শর্তের শিথিল করা যাবে। তবে পুরো শিক্ষাজীবনে কোনো তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক নকিবুল হাসান খান ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চতুর্থ বিষয়সহ পেয়েছেন ৩.৮৮ এবং এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০। চতুর্থ বিষয় ছাড়া তাঁর ফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০-তে। বিজ্ঞপ্তির নিয়ম অনুযায়ী জিপিএ ৫.০০ স্কেলে চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৩.২০ পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই তাঁর। এর পরও ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন নকিবুল হাসান খান। রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যেও তাঁর এসব একাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে।মতানৈক্যের বিরোধে সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান
পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আশরাফ আলীর অফিসকক্ষে তালা দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন নকিবুল হাসানসহ তিন শিক্ষক। এর পরই নকিবুল হাসানের বিষয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
এ বিষয়ে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধান ড. আশরাফ আলী বলেন, গত আপগ্রেডেশন সভায় নকিবুল হাসানের একাডেমিক ফলাফলের অসংগতি দেখতে পাই। এর আগে এসব আমার জানা ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, নিয়োগে আমার কোনো দায়িত্ব ছিল না। নিয়োগ বোর্ডে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরাই তাঁকে মনোনীত করেছেন। অবৈধভাবে নিয়োগ হয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিজ্ঞপ্তির শর্ত উপেক্ষা করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তবে ওই সময়ে আমি দায়িত্বে ছিলাম না।
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে তো অনেক কিছুই হয়েছে। সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি নিয়মের বাইরে নিয়োগ তো দূরের কথা, কোনো কাজই হতে দেব না। বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এমন নিয়োগ কাম্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মো. নকিবুল হাসান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর অফিসকক্ষে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে একাধিকবার তাঁর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।