ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে উত্তরের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত না হলেও আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। নয়দিনের ব্যবধানে আবার রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় বন্যার আশঙ্কা করছে নদী এলাকার মানুষ।
গতকাল রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে যমুনার পানি সমতলে স্থিতিশীল। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উভয় নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য নদী ধরলা, দুধকুমার এবং করতোয়ার পানিও বৃদ্ধি পেতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গত ২৪ ঘণ্টায় কাউনিয়া ও এর আশপাশে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩০ মিলিমিটার।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন,‘কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া এবং কাউনিয়া উপজেলার কিছু অংশ, নীলফামারী জেলার জলঢাকা এবং কিশোরগঞ্জ =উপজেলা, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা এবং কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।’
তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বৃদ্ধি পেলেই রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চর নোহালী, চর বাগডহরা, মিনাবাজার, আলমবিদিতর ইউনিয়নের ব্যাঙপাড়া কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর বিনবিনা, মটুকপুর, লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ, ইচলি, জয়রামওঝা, চল্লিশসাল ও গজগণ্টা এবং মর্ণেয়া ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্রথমে প্লাবিত হয় তাই নয়দিনের ব্যবধানে আবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় আছে নদীসংলগ্ন এলাকার মানুষ।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন,‘আমার ইউনিয়নের প্রায় সব ওয়ার্ড নদীবেষ্টিত। তাইসতর্ক দৃষ্টিরাখাহচ্ছে।’তবে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উজানে ভারি বৃষ্টিপাত কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসতে পারে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃদ্ধির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ এবং হাতীবান্ধা ও নীলফামারীর ডিমলা নদী এলাকার মানুষ।’
এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে আবারো বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি।এতে করে বন্যার আশঙ্কায় দিন পার করছে নদীপাড়ের মানুষ।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গতকাল ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১০৩ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১৩৭ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোয় প্রবেশ করতে শুরু করেছে পানি।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, চর খিতাবখা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুড়া, রামহরি ও কালিরহাট এলাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন অন্যদিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে এবং ধরলার অববাহিকার মোগলবাসা ইউনিয়নের চরসিতাইঝাড় এলাকায়।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখা এলাকার গফুর মিয়া বলেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার কমে যাচ্ছে। এখনো ঘর-বাড়িতে পানি ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে ভাঙন রয়েছে। আমরা তিস্তাপাড়ের মানুষ ভাঙন নিয়ে দুশ্চিন্তায় এ এলাকায় গত তিন মাসে ৩০টির মতো পরিবার নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছে। খিতাবখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আমাদের ঘরবাড়িও হুমকির মুখে।’
রাজারহাট উপজেলায় স্থাপিত কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিন মিয়া বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।’খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিপাতের ফলে নিচু এলাকার অনেক আমন খেতে পানি জমে আমন চারা তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নিচু এলাকার আমন খেত তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর বৃষ্টিপাত না হলে পানি নেমে যাওয়ার কথা জানান এসব এলাকার কৃষক।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে তা ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছার আশঙ্ক রয়েছে।
আপাতত বড়কোনো বন্যার শঙ্কানেই পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন।