এ বছর পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় সারাদেশে মোট ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২১টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে। কোরবানির সংখ্যার সঙ্গে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে রয়েছে প্রত্যক্ষ সংযোগ। চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প। চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আসে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিক থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের অবস্থান ছিল চতুর্থ। পশুর মাংস বাংলাদেশের জনগণের অন্যতম প্রিয় খাদ্য। ফলে, আমাদের দেশে সারাবছর গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশু জবাই করা হয়। তাছাড়া প্রতিবছর এদেশে প্রচুর পরিমাণে পশু কোরবানি করা হয়। ফলে, বাংলাদেশে পশুর চামড়ার পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। এসব চামড়াই আমাদের দেশে চামড়া শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এদেশের চামড়া শিল্পের পেছনের ইতিহাসের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে তেমন কোন চামড়া শিল্প গড়ে ওঠেনি। তখন এদেশের চামড়া কাঁচামাল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ, কানপুর ও মাদ্রাজে প্রক্রিয়াকরণের জন্য পাঠানো হতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সরকার এদেশে চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। একটি ঢাকার হাজারীবাগে, অপরটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটে। ১৯৪৯ সালে সরকারী পর্যায়ে এদেশে চামড়া শিল্পের ওপর একটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় কিন্তু সেই পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। পরবর্তীকালে উন্নতমানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ১৯৫০ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির গোড়াপত্তন ঘটে।
১৯৫১ সালে আর পি সাহা নারায়ণগঞ্জে একটি ট্যানারি স্থাপন করেন। পরে ১৯৬০ সালে কতিপয় পাকিস্তানী চামড়া ব্যবসায়ীর উদ্যোগে ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় আধুনিক ট্যানারি স্থাপিত হয়। তখন দেশে স্থাপিত মোট ৫৫টি মাঝারি ও বড় আকারের ট্যানারির মধ্যে ৩০টির মালিক ছিলেন তারা। আধুনিক ট্যানারি বলতে তখন সেগুলোকেই বুঝাত। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ধরনের ট্যানারির মালিক ছিলেন কিছুসংখ্যক বাঙালী। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ৩০টি বড় ট্যানারি সরকার অধিগ্রহণ করে, কিন্তু দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য লোকসান হওয়ায় সেগুলো আবার ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছেড়ে দিতে হয়। বর্তমানে সারাদেশে ট্যানারির সংখ্যা ২০০টির ওপরে, ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগে পরিবেশ দূষণ করছে বলে এ শিল্পকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
দুই শতাধিক ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬০টিরও অধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অত্যন্ত আধুনিক। চামড়াজাত দ্রব্য আমাদের রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান খাত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, চীন, হংকং প্রভৃতি দেশ আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের প্রধান ক্রেতা। দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য থেকে রফতানি আয় ছিল ৩৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা দেশের মোট রফতানি আয়ের ১.১০ শতাংশ।বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যসামগ্রী তৈরি হচ্ছে; যেমন- জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, পার্স, ওয়ালেট, ট্রাভেল কিটস, ফুটওয়্যার, জ্যাকেট, থ্রি কোয়ার্টার্স, স্কার্ট, লংকোট, ওয়েস্ট চামড়া, ফিনিশড্ চামড়া ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় একটি বড় খাত চামড়া শিল্প। চামড়া শিল্পের সম্ভাবনার কথা জোরেসোরেই বলছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের গুণগতমানের চামড়া, সস্তা দরের শ্রমিক, কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতাসহ অন্যান্য তুলনামূলক সুবিধা এ শিল্পের সম্ভাবনার দিকটিই জানান দিচ্ছে। ফরাসিদের ফ্রেঞ্চ কাফের পর মানের দিক থেকে বাংলাদেশের চামড়াই বিশ্বের সেরা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ রকম স্মুথ গ্রেইনের চামড়া বিশ্বের অন্য কোথাও মেলে না। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব বাজারে চামড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের তৈরি চামড়াজাত পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। বর্তমানে বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ এ বাজারের মাত্র ০.৫ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। অথচ বাংলাদেশ অতি সহজেই এ বাজারের একটি বড় অংশ দখল করতে পারে।
বাংলাদেশের চামড়া রফতানির বাজার প্রতিবছর ১০% থেকে ১৫% হারে বাড়ছে এবং টাকার অঙ্কেও তা বছরে গড়ে ৩০ মিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়ার পাশাপাশি জুতা, ট্রাভেল, ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ, জ্যাকেট প্রভৃতি বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মসৃণ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য জাপান এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। পুমা, পিভোলিনোস, হুগো বস প্রভৃতি বিশ্বখ্যাত কোম্পানির বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহটা এই আগ্রহের প্রমাণ এবং চামড়া শিল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনার দিকটি আমাদের সামনে তুলে ধরে। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার পিছনে আরও কিছু কারণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
বিশ্বের প্রায় ৭৫ ভাগ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার চীনের দখলে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের বাণিজ্যনীতি পরিবর্তনের ফলে সেখান থেকে চামড়া কারখানার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়ার জুতার রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৮৯ শতাংশ আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৭৩ শতাংশ। যার ফলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে বিদেশী ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের প্রধান আকর্ষণ। কারণ, এ শিল্পের জন্য বাংলাদেশে রয়েছে পর্যাপ্ত কাঁচামাল, চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সস্তা শ্রম।
তাছাড়া রয়েছে জুতা তৈরির জন্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা। বাংলাদেশের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হলো ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা। এর বাইরে সম্প্রতি জাপান, ভারত, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়াতেও বাজার গড়ে উঠেছে। ফলে, উত্তরোত্তর এই শিল্পের বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশী চামড়ার মান অন্যান্য দেশের থেকে অনেক উন্নতমানের। ফলে, ইউরোপ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রাপ্তি আমাদের দেশে চামড়া শিল্পের বিকাশ সাধনের অন্যতম নিয়ামক। বাংলাদেশ জাপানসহ আরও অনেক দেশ থেকে এই সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশের জুতা ও ব্যাগ তৈরিতে সক্ষমতা বাড়ছে। এজন্য বৈশ্বিক ব্র্যান্ড নাইকি, এ্যাডিডাস, টিম্বারল্যান্ড, সিয়াস, ডায়েচম্যান, জেনেসকো প্রভৃতি বাংলাদেশ থেকে জুতা কেনা শুরু করেছে। বর্তমানে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে সরকার ১৫ শতাংশ ভর্তুকি সুবিধা প্রদানের ফলে বিদেশী উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে আমাদের দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। যার ফলে যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চামড়া শিল্পের মূল কাঁচামাল দেশেই উৎপাদন হয়, যার ফলে এই শিল্পের জন্য কিছু রাসায়নিক দ্রব্য সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ছাড়া আর বেশি আমদানি করতে হয় না। এজন্য দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তার এই শিল্প খাতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসঙ্গে চামড়াশিল্প অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
এ কারণে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পরিকল্পিত উপায়ে যথাযথভাবে এ খাত সমৃদ্ধ করা হলে বছরে তিন হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে কুষ্টিয়া গ্রেড খ্যাত বাংলাদেশের ছাগলের চামড়ার চাহিদা রয়েছে প্রচুর। যদি এ চাহিদার বিপরীতে জোগান নিশ্চিত করা যায়, তবে তা যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চামড়া শিল্পের মানোন্নয়নে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে আরও লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন, চামড়া শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা, চামড়া সংরক্ষণে ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ এই শিল্পের সম্ভাবনাকে শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। রফতানি ক্ষেত্রে এ খাতের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার চামড়া শিল্পের উন্নয়নে মালিকদের উৎসাহ দেয়ার জন্য ক্যাশ সাবসিডি প্রদানের নীতি অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যবস্থা উদ্যোক্তাদের দারুণভাবে উৎসাহিত করে। সরকার রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতে নিয়মিত ঋণ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। ফলে, প্রকৃত ব্যবসায়ীর বাইরেও ট্রেড লাইসেন্সধারী ও রফতানি লাইসেন্সধারী অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসায় জড়িত আছে। ভ্যালু এডিশন বৃদ্ধির জন্য সরকার ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানি নিষিদ্ধ করে। এর উদ্দেশ্য হলো ক্রাস্ট ও ফিনিশড্ চামড়া রফতানি করে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। অপরদিকে সরকার রফতানি বৃদ্ধির জন্য মূলত দু’ভাবে ইনসেন্টিভ দেয়ার ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এগুলোর একটি হচ্ছে প্রত্যাহারকৃত শুল্ক ও অপরটি হচ্ছে রফতানি কৃতিত্ব লাইসেন্স।
চামড়া শিল্পের প্রচুর সুযোগ ও সম্ভাবনা বিদ্যমান আছে এটা যেমন সত্য, সেই সঙ্গে সমস্যা থাকার কারণে পুরোপুরি বিকাশ এখনও সম্ভব হয়নি। এর পেছনে অনেক অন্তরায় রয়েছে। কোরবানির সময় আমরা লক্ষ্য করি চামড়া ক্রয় ও গুদামজাতকরণে চামড়া ক্রয়কারী সংস্থাগুলোর প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। আমাদের ট্যানারি শিল্পগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। ফলে, এসব ছোট ছোট ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ফিনিশ্ড লেদার তৈরি করতে পারে না। চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
এতে চামড়া শিল্পের উৎপাদন অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। চামড়া শিল্পের জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। দক্ষ জনশক্তির অভাবে আমাদের চামড়া শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা কম। আমাদের দেশে চামড়া শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পনগরী স্থাপিত হয়েছে অতিসম্প্রতি সাভারে। এর পূর্বে শহরে, নগরে ও শহরতলীতে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান যত্রতত্র স্থাপিত হয়েছে এবং ট্যানারি থেকে নির্গত বর্জ্যে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়েছে। বর্তমানে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপিত হলেও সেখানে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাঁচা চামড়া গুদামজাতকরণের জন্য যে পরিমাণ আড়ত দরকার তারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ সমস্যাগুলো মোকাবেলা করে চামড়া শিল্পের উত্তরোত্তর বিকাশের জন্য বর্তমান সরকার যথেষ্ট তৎপর। এক্ষেত্রে সরকার আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে চামড়া শিল্পের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
বিশেষ করে চামড়া ক্রয়ে নিয়োজিত ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যাতে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের ছোট ছোট ট্যানারিগুলো যাতে ফিনিশ্ড লেদার তৈরি করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য ফিনিশিং ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার চালু করতে হবে। চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ দেশের অভ্যন্তরেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির জোগান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজির আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ এ ধরনের আরও প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে লোকালয় থেকে দূরে চামড়া শিল্পের জন্য পৃথক শিল্পনগরী স্থাপন করা দরকার এবং এসব শিল্প এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, পানি সরবরাহ, কাঁচা চামড়ার আড়ত নির্মাণ, বিদ্যুত গ্যাস সরবরাহ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।
বিদেশের বাজারে আমাদের চামড়াজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলা ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের দূতাবাসগুলো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আমাদের দেশে আলাদা কোন চামড়ানীতি নেই। সুতরাং এ শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে পাট ও চায়ের মতো সুনির্দিষ্ট চামড়ানীতি প্রণয়ন করা দরকার।
আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রফতানি আয় বৃদ্ধির কোন বিকল্প পথ নেই। চামড়াশিল্পকে একটি সম্ভাব্য রফতানিমুখী ও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চামড়া উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা একান্ত প্রয়োজন।
যেহেতু শিল্প একটি রফতানিমুখী শিল্প, সুতরাং এর আন্তর্জাতিক বিপণন বৃদ্ধির দক্ষতা বাড়াতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য মেলায় উপস্থিত হয়ে আমাদের চামড়ার গুণগত মান প্রদর্শন করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।