ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আজ শনিবার রাজকীয় আয়োজনে শুরু হচ্ছে বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলন। গতকাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক দেশের নেতা ও প্রতিনিধিরা দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন। বিশ্বের অতিথিদের স্বাগত জানাতে সেজে উঠেছে ভারত মণ্ডপম, প্রগতি ময়দান থেকে সমগ্র রাজধানী। সম্মেলনকে সার্বিকভাবে সফল করতে কোনো ঘাটতি রাখেনি নরেন্দ্র মোদির সরকার। নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। এ বছর ভারতের সভাপতিত্বে আয়োজিত জি-২০-এর থিম হলো—‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ।’
কোথায় কখন সম্মেলন
নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপমে বসছে জি-২০ সম্মেলন। মণ্ডপমের প্রবেশদ্বারে বসানো হয়েছে ২৭ ফুট দীর্ঘ নৃত্যরত নটরাজের মূর্তি। এছাড়া প্রগতি ময়দানসহ সমগ্র দিল্লি রঙিন আলোয় সুসজ্জিত করা হয়েছে। ভারতের স্থানীয় সময় আজ সকাল ৮টায় ভারত মণ্ডপমে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর বেলা ১১টা নাগাদ সম্মেলনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে।
জি-২০ ভুক্ত দেশ
এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরো ১৯টি দেশ। এসব দেশ হচ্ছে—আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। স্পেন সব সময়ই অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ পায়। এবার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সম্মেলনে অর্থনীতি, পরিবেশ, পরিকাঠামো, উন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে জি-২০ ভুক্ত সদস্য দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
কড়া নিরাপত্তা
এ উপলক্ষে ৮, ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর তিন দিন দিল্লিকে যানজটমুক্ত রাখতে ছুটি দেওয়া হয়েছে সব স্কুল-কলেজ-অফিস। সবার সুরক্ষার কথা ভেবে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজধানীকে। ঢেলে সাজানো হয়েছে প্রগতি ময়দান চত্বর। সরকারি অতিথিদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে ভারত। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এখন দিল্লির আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় বন্দুক নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন স্নাইপাররা। হেলিকপটার থেকে দিল্লির বিভিন্ন অলিগলিতে নজর রাখছেন সেনাবাহিনী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) কমান্ডোরা। জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের থাকার জন্য যে বিলাসবহুল হোটেলে ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেগুলোর চারদিকে কড়া নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা ব্যক্তিগত বিমানে নয়াদিল্লি আসছেন। তাদের আগমনের কথা মাথায় রেখে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ যানজটমুক্ত রাখতে বেশ কয়েকটি বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
১৫টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন মোদি
সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই সম্মেলন মানব উন্নয়নে নতুন পথ তৈরি করবে। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছেন, আমরা এসডিজির অগ্রগতি, ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়ন এবং একবিংশ শতাব্দীর বহু পাক্ষিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার উপায় খুঁজছি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্মেলনের মধ্যেই অন্তত ১৫টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী মোদি গতকালই তিনটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন মোদি। তারপর মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রাভিন্দ কুমার জগুনাথ এবং গতকালের মতো শেষ বৈঠকটি হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে এ কথা জানিয়েছিলেন।
আজ শনিবার সম্মেলনের প্রথম দিনেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদি। এছাড়াও কোয়াডসঙ্গী জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গেও মোদির বৈঠকের কথা রয়েছে। একই দিনে জার্মানি ও ইতালির রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে মোদি বৈঠকে বসবেন। এছাড়াও কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। কাল সম্মেলনের শেষ দিন মধ্যাহ্ন ভোজের বৈঠকে যোগ দেবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ও নরেন্দ্র মোদি। একই দিনে তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল ও নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে মোদি বৈঠক করবেন। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মোদি আলোচনায় বসবেন। এছাড়াও রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে জি-২০ সম্মেলনেও উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
যৌথ ঘোষণা প্রায় প্রস্তুত
ভারত গতকাল জানিয়েছে, সম্মেলনের যৌথ ঘোষণা প্রায় প্রস্তুত। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। ভারতের জি-২০ শেরপা বা সমঝোতাকারী অমিতাভ কান্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যৌথ ঘোষণা হবে উন্নয়নশীল ও গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর। তিনি বলেন, যৌথ ঘোষণায় ঐকমত্য হওয়ায়ই সম্মেলনের বড় চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্য।
পুতিনের ভিডিও ভাষণের পরিকল্পনা নেই
সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের যোগ না দেওয়ার কথা আগেই জানানো হয়েছিল। এবার জানানো হয়েছে যে তার ভিডিও ভাষণ দেওয়ারও কোনো পরিকল্পনা নেই। বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন পৃথক ভিডিও ভাষণ দেবেন কি না। জবাবে পেসকভ বলেন, ‘না, কোনো পরিকল্পনা নেই।’ নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
কোথায় থাকবেন রাষ্ট্রনেতারা
রাষ্ট্রনেতা এবং বিদেশি প্রতিনিধিদের থাকার জন্য দিল্লি ও গুরুগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপ্রধানরা দিল্লির হোটেলগুলোতে থাকবেন বলে জানা গেছে। জি-২০ দেশগুলোর পাশাপাশি অন্য বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকেও অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দিল্লিতে। এর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিংগাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এসব দেশের রাষ্ট্রনেতাদেরও বিলাসবহুল হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।