পিএসজি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার পর থেকেই ফরমে উড়ছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মায়ামির জার্সি গায়ের সেই জাদুকরী ফরমটা টেনে আনলেন জাতীয় দলের জার্সি গায়েও। গতকাল শুক্রবার মেসি জাদুতেই ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শুভ সূচনা করেছে আর্জেন্টিনা। মেসির জাদুকরী ফ্রি কিকে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
দলকে জয় এনে দেওয়া গোলটির মাধ্যমে মেসি ব্যক্তিগত একটা কীর্তিও গড়েছেন। ভাগ বসিয়েছেন বন্ধু লুইস সুয়ারেজের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে। এতদিন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড সুয়ারেজের একার দখলে ছিল। উরুগুয়ের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মোট ২৯টি গোল করেছেন তিনি। ২৮ গোল নিয়ে মেসি ছিলেন দুই নম্বরে। গতকাল ইকুয়েডরের বিপক্ষে গোল পাওয়ায় মেসিরও বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গোল হলো ২৯টি।
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বলিভিয়ার বিপক্ষে মেসি সুযোগ পাবেন বন্ধু সুয়ারেজকে টপকে রেকর্ডটি একার করে নেওয়ার। সুযোগ পেলে সুয়ারেজও হয়তো গোল সংখ্যাটা বাড়িয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের চলমান বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুই ম্যাচের জন্য সুয়ারেজকে দলেই নেননি উরুগুয়ের আর্জেন্টাইন কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। বিয়েলসা দলে নেননি উরুগুয়ের আরেক তারকা এডিনসন কাভানিকেও।
গতকাল দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ ছিল তিনটি। আর্জেন্টিনার মতো জয়ে শুভ সূচনা করেছে কলম্বিয়াও। নিজেদের মাঠে তারাও ১-০ গোলে জিতেছে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে। কলম্বিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটা করেছেন রাফায়েল সান্তোস বোরে মৌরি, ম্যাচের ৪৬ মিনিটে। প্যারাগুয়ে ও পেরুর মধ্যকার অন্য ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে।
কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের ১০ মাসও হয়নি। এরই মধ্যে আরেকটি বিশ্বকাপের বাছাই যুদ্ধের শুরুর ম্যাচে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি পূর্ণ শক্তির দলই নামিয়েছিলেন। আক্রমণে মেসির সঙ্গে লাওতারো মার্টিনেজ, নিকোলাস গঞ্জালেস। মাঝমাঠে রদ্রিগো ডি পল, এনজো ফার্নান্দেজ ও অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। রক্ষণে মলিনা, রোমেরো, ওটামেন্ডি, ত্যাগলিয়াফিকো। গোলপোস্টে এমিমিলিয়ানো মার্টিনেজ। বদলি হিসেবে খেলেছেন জুলিয়ান আলভারেজ, ডি মারিয়া, পারেদেস, এজেকুয়েল প্যালাসিওসরাও।
নিজেদের মাঠ বুয়েনস এইরেসের এস্তাদিও মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা। বল দখল, আক্রমণ, গোলমুখে শট—সব ক্ষেত্রে একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল মেসিদের। কিন্তু কিছুতেই ইকুয়েডরের রক্ষণ দেওয়াল ভেদ করতে পারছিলেন না মেসি-মার্টিনেজরা। অবশেষে ৭৮ মিনিটে ফ্রি কিক জাদুতে ইকুয়েডরের রক্ষণ ও গোলরক্ষককে বোকা বানিয়েছেন মেসি। ২০ গজ দূর থেকে মেসির বাঁকানো ফ্রি কিক ঠেকানোর জন্য ঝাঁপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েও কি কারণে যেন থমকে যান ইকুয়েডরের গোলরক্ষক এরলান গ্যালিন্দেজ। বল তার চোখের সামনে দিয়ে ঢুকে যায় জালে!
পরে আর গোল না পেলেও ম্যাচের ৮৮ মিনিটে মেসিকে নিয়ে আরেক ঘটনা ঘটেছে। তাকে তুলে নিয়ে বদলি হিসেবে নামানো হয় এজেকুয়েল প্যালাসিওসকে। মেসি অধিনায়কত্বের আর্মব্র্যান্ড খুলে ডি মারিয়ার বাহুতে বেঁধে দিয়ে যখন মাঠ ছাড়েন, মনুমেন্টালের দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানান। সঙ্গে একটা প্রশ্নও উঠেছে, কেন মেসিকে বদলি করা হলো? ম্যাচ শেষে উত্তরটা মেসিই দিয়েছেন, ‘আমি একটু ক্লান্ত ছিলাম।’