ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন সদস্য দেশগুলোর নেতারা। তাদের মতৈক্যের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত হয়েছে ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’। এই সম্মেলনের সভাপতি ভারত। নয়াদিল্লির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এমন ঐকমত্য সবার জন্যই বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা কিছুটা দুরূহ হয়ে উঠেছিল।
গতকাল শনিবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এক ঘোষণায় বলেন, সুখবর রয়েছে, আমাদের টিমের কঠোর প্রচেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের সহযোগিতায় নয়াদিল্লি জি-২০ নেতাদের সম্মেলনের ঘোষণায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে। তিনি বলেন, আমার অনুরোধ, এটি সব জি-২০ নেতার গ্রহণ করা উচিত। আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা এটি সম্ভব করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরি জানিয়েছেন, জি-২০-র দিল্লি ঘোষণায় মোট ৭৩টি ফলাফল এবং ৩৯টি সংযুক্ত নথি রয়েছে, যা আগের সম্মেলনগুলোর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। স্বাস্থ্য, জলবায়ু, জলবায়ু অর্থায়ন, সব দিক দিয়েই এই সম্মেলনে বড় অর্জন হয়েছে। এটি কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে। বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুপ্রেরণা দেবে দিল্লি ঘোষণা।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজনে ভারতের কাছে সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সদস্য দেশগুলোর সবার সম্মতিক্রমে একটি ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ (দিল্লি ডিক্লারেশন) জারি করা। বস্তুত গত এক বছর ধরে জোটের বিভিন্ন বৈঠকেই দেখা গেছে ইউক্রেন সংকট বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধের কারণে কোনো সর্বসম্মত বিবৃতি দেওয়া যায়নি। বেশির ভাগ বৈঠকের পরই যেটা জারি করা হতো তাকে বলা হতো ‘আউটকাম ডকুমেন্ট’ তাতে যেমন কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেটা বলা থাকত, তেমনি কারা কোথায় আপত্তি জানিয়েছে সেটাও উল্লেখ থাকত।
দিল্লির অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো অধ্যাপক হর্ষ ভি পন্থ বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতিতে ফ্রল্টলাইনগুলো এখন এতটাই প্রকট যে দিল্লিতে যদি কোনো যৌথ ঘোষণাপত্র জারি করা সম্ভব নাও হতো তাহলেও ভারতকে দোষ দেওয়া যেত না।
কিন্তু তার পরও যে রাশিয়া, চীন, আমেরিকা বা ব্রিটেনের মতো দেশগুলোকে কাছাকাছি এনে একটা ঘোষণাপত্রে ভারত সবাইকে রাজি করাতে পেরেছে সেটাকে তিনি ‘বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য’ হিসেবেই দেখা যায়।
আফ্রিকান ইউনিয়নকে স্বাগত : বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে স্থায়ী সদস্য হিসেবে আফ্রিকান ইউনিয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশের সংখ্যা ৫৫। আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০ সদস্য করার ঘোষণাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান বিশ্বনেতারা।
যৌথ বিবৃতি নিয়ে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার : ইউক্রেন ইস্যু, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’ শীর্ষক দুই দিনের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে। এতে অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে উপস্থিত আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রমুখ। তবে এতে উপস্থিত নেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লালাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রাশিয়া প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে। গত বছরের সম্মেলনে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। এবার যদি ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন না ঘটে তাহলে সম্মেলনের নেতাদের যৌথ বিবৃতিকে ব্লক করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ল্যাভরভ।
মোদির সামনে নেমপ্লেটে ‘ভারত’ : ভারত বনাম ইন্ডিয়া নিয়ে ভারতে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে তার মধ্যে কঠোর একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। শনিবার জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময়ে তার সামনে যে নেমপ্লেট রাখা হয়েছে তাতে লেখা ‘ভারত’। বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু ‘ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে যে ‘ভারত’ শব্দ ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে তীব্র রাজনৈতিক উত্তাপ। পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন বসবে এ মাসের শেষের দিকে। সেখানে ইন্ডিয়াকে ভারত নামে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা নিয়ে চলছে জল্পনা। বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণে জি-২০ বুকলেটে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ভারত’ শব্দ। এর শিরোনাম- ‘ভারত, দ্য মাদার অব ডেমোক্রেসি’।