দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চেষ্টার কোন কমতি নেই। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সিনিয়র সাংবাদিক, বিদেশী কূটনীতিক ও ইভিএম বিশেষজ্ঞদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সপ্তাহব্যাপী সংলাপ করবে ইসি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রবিবার সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে। আর ৩১ জুলাই শেষ হবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও প্রথম দফার মতো এবারও যাচ্ছে না দলটি।
সংবিধান অনুসারে ২০২৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এ নির্বাচনের জন্য ইসির হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ ১৮ মাস। এর আগেই নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছু করতে হবে। এ ছাড়া কতটি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা হবে তাও চূড়ান্ত করতে হবে। তাই নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয় ইসি। এ জন্য সর্বমহলের আস্থা অর্জনের চেষ্টাও করছে তারা। ইসির প্রধান লক্ষ্য- কিভাবে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সে জন্য পরামর্শ গ্রহণ করা। এ জন্য আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ডেকে দফায় দফায় সংলাপ করছে ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সকল অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। প্রথম দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ করেছে। ওই সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইভিএমে ভোটের বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে। রবিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হচ্ছে দ্বিতীয় দফার সংলাপ। এই সংলাপে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নেয়া হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সংলাপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবে।
এর আগের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করে ওই নির্বাচন কমিশন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসার মধ্য দিয়ে তখন সংলাপ শুরু হয়। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ করে তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে এবারের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই সংলাপ শুরু করে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব নেয়ার পর এত তাড়াতাড়ি আগের কোন কমিশন সংলাপের উদ্যোগ নেয়নি।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশন চায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হোক। এ জন্যই সব নিবন্ধিত দলের মতামতকেই গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। নির্বাচনের বিষয়ে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয় তাহলে এক রকম আর না হলে অন্যরকম প্রস্তুতি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।
রবিবার থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সংলাপ চলবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রতিদিন সংলাপের জন্য চার ধাপের সময় নির্ধারিত রাখা হয়েছে- সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা, দুপুর ১২টা থেকে ১টা, বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। সংলাপে নির্ধারিত কোন আলোচ্যসূচী থাকছে না। আলোচনা হবে উন্মুক্ত। কিভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায় সে বিষয়ে প্রতিটি দল নিজেদের মতামত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারবেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফায় সংলাপ করে ইসি। ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিনদিনব্যাপী ওই দফায়ও নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে ডেকেছিল কমিশন। সেই মতবিনিময় সভায় ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। বিএনপির নেতৃত্বে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই যে ১১টি দল প্রথম দফা সংলাপে যায়নি তারা এবারও যাচ্ছে না বলে বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত সূচী অনুসারে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। পরদিন ১৮ জুলাই সোমবার সংলাপ হবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে।
১৯ জুলাই মঙ্গলবার ইসির সংলাপ হবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে। ২০ জুলাই বুধবার সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বিএনপির সঙ্গে। যদিও বিএনপি ইসির সংলাপে যাবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ) ও গণফ্রন্টকে।
২৪ জুলাই ইসির সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। ২৫ জুলাই সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডি)। ২৬ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
২৭ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ২৮ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। আর সর্বশেষ ৩১ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। সকালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির সংলাপ হবে বিকেলে। ওইদিন সংলাপ শেষে ইসির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে সংলাপে উঠে আসা আলোচনার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
সূত্র মতে, বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে সে বিষয়ে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে। এর বাইরে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চালাচ্ছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিশ্চিত করা না গেলেও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রেখে কিভাবে মোটামুটি নিরপেক্ষ পরিবেশে একটি নির্বাচন করা যায় সে চেষ্টায় বিএনপি এখন মরিয়া। তাই ইসির সংলাপের বিষয়ে তাদের আগ্রহ নেই।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আমরা আগেই বলেছি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা যাব না। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গিয়ে কোন লাভ হবে না।
ইসি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের মতামত নেবে নির্বাচন কমিশন। তবে প্রয়োজন হলে শেষ ধাপে আরও একবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। এর পর ২৯ আগস্টের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য নতুন আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে। এর পর প্রয়োজনে আইন সংস্কার, প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন ভোটারসহ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা, দেশে বিদেশী পর্যবেক্ষকের তালিকা ঠিক করা ও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে কত আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। তবে ৩০০ আসনের মধ্যে কতটিতে ইভিএমে ভোট হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইসি। তবে নির্বাচন কমিশনের ১০০ আসনের বেশি ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা এখন নেই বলে জানা যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চেষ্টার কোন কমতি নেই। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সিনিয়র সাংবাদিক, বিদেশী কূটনীতিক ও ইভিএম বিশেষজ্ঞদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সপ্তাহব্যাপী সংলাপ করবে ইসি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রবিবার সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে। আর ৩১ জুলাই শেষ হবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও প্রথম দফার মতো এবারও যাচ্ছে না দলটি।
সংবিধান অনুসারে ২০২৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এ নির্বাচনের জন্য ইসির হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ ১৮ মাস। এর আগেই নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছু করতে হবে। এ ছাড়া কতটি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা হবে তাও চূড়ান্ত করতে হবে। তাই নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয় ইসি। এ জন্য সর্বমহলের আস্থা অর্জনের চেষ্টাও করছে তারা। ইসির প্রধান লক্ষ্য- কিভাবে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সে জন্য পরামর্শ গ্রহণ করা। এ জন্য আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ডেকে দফায় দফায় সংলাপ করছে ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সকল অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। প্রথম দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ করেছে। ওই সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইভিএমে ভোটের বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে। রবিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হচ্ছে দ্বিতীয় দফার সংলাপ। এই সংলাপে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নেয়া হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সংলাপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবে।
এর আগের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করে ওই নির্বাচন কমিশন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসার মধ্য দিয়ে তখন সংলাপ শুরু হয়। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ করে তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে এবারের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই সংলাপ শুরু করে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব নেয়ার পর এত তাড়াতাড়ি আগের কোন কমিশন সংলাপের উদ্যোগ নেয়নি।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশন চায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হোক। এ জন্যই সব নিবন্ধিত দলের মতামতকেই গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। নির্বাচনের বিষয়ে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয় তাহলে এক রকম আর না হলে অন্যরকম প্রস্তুতি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।
রবিবার থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সংলাপ চলবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রতিদিন সংলাপের জন্য চার ধাপের সময় নির্ধারিত রাখা হয়েছে- সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা, দুপুর ১২টা থেকে ১টা, বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। সংলাপে নির্ধারিত কোন আলোচ্যসূচী থাকছে না। আলোচনা হবে উন্মুক্ত। কিভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায় সে বিষয়ে প্রতিটি দল নিজেদের মতামত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারবেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফায় সংলাপ করে ইসি। ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিনদিনব্যাপী ওই দফায়ও নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে ডেকেছিল কমিশন। সেই মতবিনিময় সভায় ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। বিএনপির নেতৃত্বে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই যে ১১টি দল প্রথম দফা সংলাপে যায়নি তারা এবারও যাচ্ছে না বলে বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত সূচী অনুসারে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। পরদিন ১৮ জুলাই সোমবার সংলাপ হবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে।
১৯ জুলাই মঙ্গলবার ইসির সংলাপ হবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে। ২০ জুলাই বুধবার সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বিএনপির সঙ্গে। যদিও বিএনপি ইসির সংলাপে যাবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ) ও গণফ্রন্টকে।
২৪ জুলাই ইসির সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। ২৫ জুলাই সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডি)। ২৬ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
২৭ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ২৮ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। আর সর্বশেষ ৩১ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। সকালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির সংলাপ হবে বিকেলে। ওইদিন সংলাপ শেষে ইসির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে সংলাপে উঠে আসা আলোচনার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
সূত্র মতে, বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে সে বিষয়ে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে। এর বাইরে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চালাচ্ছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিশ্চিত করা না গেলেও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রেখে কিভাবে মোটামুটি নিরপেক্ষ পরিবেশে একটি নির্বাচন করা যায় সে চেষ্টায় বিএনপি এখন মরিয়া। তাই ইসির সংলাপের বিষয়ে তাদের আগ্রহ নেই।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আমরা আগেই বলেছি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা যাব না। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গিয়ে কোন লাভ হবে না।
ইসি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের মতামত নেবে নির্বাচন কমিশন। তবে প্রয়োজন হলে শেষ ধাপে আরও একবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। এর পর ২৯ আগস্টের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য নতুন আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে। এর পর প্রয়োজনে আইন সংস্কার, প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন ভোটারসহ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা, দেশে বিদেশী পর্যবেক্ষকের তালিকা ঠিক করা ও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে কত আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। তবে ৩০০ আসনের মধ্যে কতটিতে ইভিএমে ভোট হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইসি। তবে নির্বাচন কমিশনের ১০০ আসনের বেশি ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা এখন নেই বলে জানা যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চেষ্টার কোন কমতি নেই। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সিনিয়র সাংবাদিক, বিদেশী কূটনীতিক ও ইভিএম বিশেষজ্ঞদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সপ্তাহব্যাপী সংলাপ করবে ইসি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রবিবার সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে। আর ৩১ জুলাই শেষ হবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও প্রথম দফার মতো এবারও যাচ্ছে না দলটি।
সংবিধান অনুসারে ২০২৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এ নির্বাচনের জন্য ইসির হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ ১৮ মাস। এর আগেই নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছু করতে হবে। এ ছাড়া কতটি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা হবে তাও চূড়ান্ত করতে হবে। তাই নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয় ইসি। এ জন্য সর্বমহলের আস্থা অর্জনের চেষ্টাও করছে তারা। ইসির প্রধান লক্ষ্য- কিভাবে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সে জন্য পরামর্শ গ্রহণ করা। এ জন্য আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ডেকে দফায় দফায় সংলাপ করছে ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সকল অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। প্রথম দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ করেছে। ওই সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইভিএমে ভোটের বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে। রবিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হচ্ছে দ্বিতীয় দফার সংলাপ। এই সংলাপে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নেয়া হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সংলাপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবে।
এর আগের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করে ওই নির্বাচন কমিশন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসার মধ্য দিয়ে তখন সংলাপ শুরু হয়। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ করে তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে এবারের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই সংলাপ শুরু করে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব নেয়ার পর এত তাড়াতাড়ি আগের কোন কমিশন সংলাপের উদ্যোগ নেয়নি।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশন চায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হোক। এ জন্যই সব নিবন্ধিত দলের মতামতকেই গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। নির্বাচনের বিষয়ে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয় তাহলে এক রকম আর না হলে অন্যরকম প্রস্তুতি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।
রবিবার থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সংলাপ চলবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রতিদিন সংলাপের জন্য চার ধাপের সময় নির্ধারিত রাখা হয়েছে- সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা, দুপুর ১২টা থেকে ১টা, বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। সংলাপে নির্ধারিত কোন আলোচ্যসূচী থাকছে না। আলোচনা হবে উন্মুক্ত। কিভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায় সে বিষয়ে প্রতিটি দল নিজেদের মতামত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারবেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফায় সংলাপ করে ইসি। ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিনদিনব্যাপী ওই দফায়ও নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে ডেকেছিল কমিশন। সেই মতবিনিময় সভায় ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। বিএনপির নেতৃত্বে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই যে ১১টি দল প্রথম দফা সংলাপে যায়নি তারা এবারও যাচ্ছে না বলে বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত সূচী অনুসারে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। পরদিন ১৮ জুলাই সোমবার সংলাপ হবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে।
১৯ জুলাই মঙ্গলবার ইসির সংলাপ হবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে। ২০ জুলাই বুধবার সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বিএনপির সঙ্গে। যদিও বিএনপি ইসির সংলাপে যাবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ) ও গণফ্রন্টকে।
২৪ জুলাই ইসির সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। ২৫ জুলাই সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডি)। ২৬ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
২৭ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ২৮ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। আর সর্বশেষ ৩১ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। সকালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির সংলাপ হবে বিকেলে। ওইদিন সংলাপ শেষে ইসির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে সংলাপে উঠে আসা আলোচনার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
সূত্র মতে, বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে সে বিষয়ে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে। এর বাইরে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চালাচ্ছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিশ্চিত করা না গেলেও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রেখে কিভাবে মোটামুটি নিরপেক্ষ পরিবেশে একটি নির্বাচন করা যায় সে চেষ্টায় বিএনপি এখন মরিয়া। তাই ইসির সংলাপের বিষয়ে তাদের আগ্রহ নেই।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আমরা আগেই বলেছি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা যাব না। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গিয়ে কোন লাভ হবে না।
ইসি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের মতামত নেবে নির্বাচন কমিশন। তবে প্রয়োজন হলে শেষ ধাপে আরও একবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। এর পর ২৯ আগস্টের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য নতুন আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে। এর পর প্রয়োজনে আইন সংস্কার, প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন ভোটারসহ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা, দেশে বিদেশী পর্যবেক্ষকের তালিকা ঠিক করা ও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে কত আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। তবে ৩০০ আসনের মধ্যে কতটিতে ইভিএমে ভোট হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইসি। তবে নির্বাচন কমিশনের ১০০ আসনের বেশি ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা এখন নেই বলে জানা যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চেষ্টার কোন কমতি নেই। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সিনিয়র সাংবাদিক, বিদেশী কূটনীতিক ও ইভিএম বিশেষজ্ঞদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সপ্তাহব্যাপী সংলাপ করবে ইসি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রবিবার সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে। আর ৩১ জুলাই শেষ হবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও প্রথম দফার মতো এবারও যাচ্ছে না দলটি।
সংবিধান অনুসারে ২০২৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এ নির্বাচনের জন্য ইসির হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ ১৮ মাস। এর আগেই নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছু করতে হবে। এ ছাড়া কতটি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা হবে তাও চূড়ান্ত করতে হবে। তাই নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয় ইসি। এ জন্য সর্বমহলের আস্থা অর্জনের চেষ্টাও করছে তারা। ইসির প্রধান লক্ষ্য- কিভাবে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সে জন্য পরামর্শ গ্রহণ করা। এ জন্য আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ডেকে দফায় দফায় সংলাপ করছে ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সকল অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। প্রথম দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ করেছে। ওই সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইভিএমে ভোটের বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে। রবিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হচ্ছে দ্বিতীয় দফার সংলাপ। এই সংলাপে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নেয়া হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সংলাপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবে।
এর আগের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করে ওই নির্বাচন কমিশন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসার মধ্য দিয়ে তখন সংলাপ শুরু হয়। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ করে তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে এবারের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই সংলাপ শুরু করে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব নেয়ার পর এত তাড়াতাড়ি আগের কোন কমিশন সংলাপের উদ্যোগ নেয়নি।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশন চায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হোক। এ জন্যই সব নিবন্ধিত দলের মতামতকেই গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। নির্বাচনের বিষয়ে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয় তাহলে এক রকম আর না হলে অন্যরকম প্রস্তুতি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।
রবিবার থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সংলাপ চলবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রতিদিন সংলাপের জন্য চার ধাপের সময় নির্ধারিত রাখা হয়েছে- সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা, দুপুর ১২টা থেকে ১টা, বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। সংলাপে নির্ধারিত কোন আলোচ্যসূচী থাকছে না। আলোচনা হবে উন্মুক্ত। কিভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায় সে বিষয়ে প্রতিটি দল নিজেদের মতামত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারবেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফায় সংলাপ করে ইসি। ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিনদিনব্যাপী ওই দফায়ও নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে ডেকেছিল কমিশন। সেই মতবিনিময় সভায় ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। বিএনপির নেতৃত্বে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই যে ১১টি দল প্রথম দফা সংলাপে যায়নি তারা এবারও যাচ্ছে না বলে বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত সূচী অনুসারে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংলাপ শুরু হবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। পরদিন ১৮ জুলাই সোমবার সংলাপ হবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে।
১৯ জুলাই মঙ্গলবার ইসির সংলাপ হবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে। ২০ জুলাই বুধবার সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বিএনপির সঙ্গে। যদিও বিএনপি ইসির সংলাপে যাবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ) ও গণফ্রন্টকে।
২৪ জুলাই ইসির সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। ২৫ জুলাই সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডি)। ২৬ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
২৭ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ২৮ জুলাই আমন্ত্রণ পেয়েছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। আর সর্বশেষ ৩১ জুলাই ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। সকালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির সংলাপ হবে বিকেলে। ওইদিন সংলাপ শেষে ইসির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে সংলাপে উঠে আসা আলোচনার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
সূত্র মতে, বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে সে বিষয়ে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে। এর বাইরে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চালাচ্ছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিশ্চিত করা না গেলেও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রেখে কিভাবে মোটামুটি নিরপেক্ষ পরিবেশে একটি নির্বাচন করা যায় সে চেষ্টায় বিএনপি এখন মরিয়া। তাই ইসির সংলাপের বিষয়ে তাদের আগ্রহ নেই।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আমরা আগেই বলেছি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা যাব না। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গিয়ে কোন লাভ হবে না।
ইসি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের পর আরও কিছু অংশীজনের মতামত নেবে নির্বাচন কমিশন। তবে প্রয়োজন হলে শেষ ধাপে আরও একবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। এর পর ২৯ আগস্টের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য নতুন আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে। এর পর প্রয়োজনে আইন সংস্কার, প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন ভোটারসহ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা, দেশে বিদেশী পর্যবেক্ষকের তালিকা ঠিক করা ও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে কত আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। তবে ৩০০ আসনের মধ্যে কতটিতে ইভিএমে ভোট হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইসি। তবে নির্বাচন কমিশনের ১০০ আসনের বেশি ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা এখন নেই বলে জানা যায়।