নির্বাচন ও সংসদ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তোলায় দেশের সুশীল সমাজের কড়া সমালোচনা করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল বুধবার সংসদে ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ পাশের আলোচনায় মন্ত্রী বলেছেন, ‘কিছু মানুষ, যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে মনে করেন, তারা নিজেদের জনগণের গার্ডিয়ান মনে করেন। নানা ডিকটেশন দেন। দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে তাকান না। তারা তাকান সুদূর পশ্চিমে। সেখান থেকে যে বাণী আসে, সেভাবে তারা এখানে ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন।’ আইনমন্ত্রী বিলটি পাশের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়।
বিলটি পাশের আগে বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীও সুশীল সমাজের সমালোচনা করেন। জাপার এই এমপি বলেন, ‘আমাদের ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন দরকার। সে জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে। টিএন শেসনের (ভারতের সাবেক সিইসি) মতো একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন থাকবে, এটা আমরা আশা করি। মেরুদণ্ড সোজা করে তারা নির্বাচন করবে। সরকার নির্বাচনের সময় রুটিন দায়িত্ব পালন করে। এটা নিয়ে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ বারবার জোর করে সংসদকে অকার্যকর, সংসদ চলে না—এরকম নানা কথা বলে। এটা হলে তো নির্বাচন লাগে না। ভারতের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ কোনো দিন প্রশ্ন করে না। তাহলে আজকে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
ফরাজী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন সঠিক হচ্ছে। ভালোভাবে হবে। আমরা চাই ফ্রি, ফেয়ার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে। নিরাপত্তা পাবে। প্রধানমন্ত্রী এটা চান। দেশবাসী চায়। বিশ্ববাসীও এটা চায়। এর বাইরে আর কিছু হবে না। এটা সবাইকে মানতে হবে। কেউ যদি সিট না পায়, জোর করে সিট দেওয়া যায় না।’ ফরাজী তার বক্তব্যে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার বাধ্যবাধকতার বিষয়টিকে সংবিধানের ব্যত্যয় হিসেবে উল্লেখ করে তা সংশোধনের দাবি জানান।
সুশীল সমাজ নিয়ে রুস্তম আলী ফরাজীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। এ দেশের জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রিভিউ পিটিশন করা হয়েছে, গত সপ্তাহে তার শুনানি হয়েছে। উচ্চ আদালতের অবকাশ শেষে আবার শুনানি হবে। সেই শুনানিতে এর সমাপ্তি ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।’
বিলটি পাশের আলোচনায় গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খান বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি অস্পষ্টতা, আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে। অনেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কখন এবং কীভাবে নির্বাচন হবে—এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি প্রতিহতের চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার দাপটে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। সরকার গঠনে যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার, সেইসংখ্যক এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেই নির্বাচনে জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। ২০১৮ সালে অধিকাংশ জায়গায় আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। এখানেও জনমতের প্রতিফলন হয়নি।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সংসদে বিল পাশ হয়েছে যে ‘দলিল যার জমি তার’। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্রের এই মালিকেরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা দলিল নিয়ে বসে আছে, কিন্তু মালিকানা তাদের হাতে নেই। সোনার বাংলার গণতন্ত্র আজ কোথায় যাচ্ছে!
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, ‘উচ্চ আদালতের তিন জন বিচারপতিকে দুর্নীতির অভিযোগে দায়িত্ব পালন থেকে অনেক দিন ধরে বিরত রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বিষয়টির সুরাহা প্রয়োজন।’ এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতিদের পদত্যাগের বিষয়টি নেই। এই সংশোধনীর রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানির পর বিষয়টি শেষ হবে বলে আশা করছি।
সংরক্ষিত আসন শূন্য হলেও উপনির্বাচন ৯০ দিনে: বিল পাশ
হওয়া ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল, ২০২৩’-এ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে সংরক্ষিত আসন শূন্য হলে ৪৫ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার বিধান আছে। সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। বিলে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, নারী আসন বণ্টন পদ্ধতিতেও সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে পাশকৃত বিলটিতে।