২০০০ সালে ডেঙ্গুর বড় আঘাতের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। রোগীর সংখ্যা বিচারে বছরভেদে কমবেশি হয়, তবে প্রায় প্রতিবছরই দেখা যায় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সরকারি পরিসংখ্যানে রোগীর যে সংখ্যা দেখানো হয়, তা ঢাকার মাত্র ৪৭টি হাসপাতাল এবং অন্যান্য জেলার অল্প কিছু হাসপাতালের তথ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ।
আবার অসংখ্য রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষা করে বাসায় চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। প্রতিবছর প্রায় একই সময়ে ডেঙ্গু আঘাত হানছে আর আমরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। আর কতকাল আমাদের ডেঙ্গু নিয়ে বসবাস করতে হবে?
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে মানুষ। ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে এটির সতর্কবার্তা আমরা জুনের শুরুতে দিয়েছি এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তা প্রচারিত হয়েছে। ঢাকায় এডিস মশার বর্তমান ঘনত্ব ডেঙ্গু ছড়ানোর উপযোগী মাত্রায় রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে হাজার হাজার মানুষ।
করোনার মতো ডেঙ্গু অদৃশ্য শক্তি নয়। ডেঙ্গু একটি দৃশ্যমান শক্তি, যাকে মোকাবেলা করা অসম্ভব নয়। ডেঙ্গু ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে আর এটির প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্যান্য মশার চেয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণও সহজ। কারণ এডিস মশা পাত্রে জমা পানিতে বংশবিস্তার করে। জমা পানির পাত্র অপসারণ কঠিন কোনো কাজ নয়। অন্যান্য মশার চেয়ে এডিস মশা কীটনাশক সহনশীল নয়, তাই কীটনাশক দিয়েও এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি ব্লকে ভাগ করে ১০টি টিম গঠন করে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। এই ১০টি টিমের প্রতিটিতে স্থানীয় তরুণ সমাজসেবকদের সম্পৃক্ত করে তাদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের যুক্ত করে দিয়ে এডিস মশার প্রজনন পাত্র ধ্বংস ও অপসারণের পাশাপাশি উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রতিটি টিমকে নিশ্চিত করতে হবে যেন তার ব্লকে কোনো এডিস মশা জন্মানোর পাত্র না থাকে। প্রতিটি ব্লকের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও এসিড মশা দমন কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়নের জন্য সিটি করপোরেশনের সেন্ট্রাল টিম থাকতে পারে। যে ব্লকে ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে কম হবে তাদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে কাজে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
ঢাকার কিছু এলাকা এখন ডেঙ্গু রোগের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। ঢাকার বাইরে কক্সবাজার শহর ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে যেসব বাসায় ডেঙ্গু রোগী রয়েছে সেসব বাসার চারপাশে কীটনাশক স্প্রে করে উড়ন্ত মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। অন্যথায় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশাগুলো অন্য মানুষকে আক্রান্ত করবে এবং এভাবেই ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকবে।
সংকটময় পরিস্থিতিতে কাউকে দোষারোপ না করে যার যার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে মশা নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থান, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, বাসটার্মিনালগুলোতে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা। আর নগরবাসীর দায়িত্ব তার বাড়ি ও আঙিনায় এডিস মশার প্রজনন যেন না হয় তা নিশ্চিত করা।
সিটি করপোরেশন ও নগরবাসীর সম্মিলিত কার্যক্রমই পারে ডেঙ্গু সমস্যার সমাধান করতে। ডায়রিয়া, করোনা, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে যেন ডেঙ্গু সংকট ভয়াবহ হয়ে না ওঠে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চলুন একসঙ্গে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করি।