পূর্ণিমা ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে পৌর শহরসহ শতাধিক গ্রাম। ডুবেছে ফসলের মাঠ, চিংড়ি ও কাঁকড়ার ঘের। গত বৃহস্পতিবার থেকে এমন অবস্থায় চার জেলায় দিনে ও রাতে কয়েক ঘণ্টা করে পানিবন্দি থাকছে কয়েক হাজার পরিবার।
পটুয়াখালী :জেলার উপকূলীয় নদনদী ও সাগরের পানি গত বুধবার থেকে বাড়তে থাকে। গতকাল শনিবার চতুর্থ দিনেও জোয়ারের পানিতে তলিয়েছে জেলার অর্ধশতাধিক চরের বিস্তীর্ণ জনপদ। বিশেষ করে রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তা ও ফসলি জমি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই দুই ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবার। পটুয়াখালী পৌর শহরের নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। চার দিন ধরে এসব এলাকায় দিনে ও রাতে দু’দফা পানি ঢুকছে।
লালুয়ার চারিপাড় গ্রামের গৃহবধূ হেনা বেগম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই তাঁরা অরক্ষিত অবস্থায় আছেন। বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জোয়ারের পানি বাড়লেও পুরো এলাকা তলিয়ে যায়। দিন ও রাতে অন্তত ১২ ঘণ্টা পানিবন্দি থাকতে হচ্ছে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধগুলো এতদিনেও মেরামত করা হয়নি।
বাগেরহাট :মোরেলগঞ্জে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌর শহরসহ নিম্নাঞ্চলের ২৫টি গ্রাম। বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক মৎস্য ঘেরে ঢুকেছে অতিরিক্ত পানি। স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও সড়ক। ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে গিয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
স্থানীয়রা জানায়, দিনে ও রাতে দু’বার করে ডুবছে পৌর শহরসহ পানগুছি নদীর তীরবর্তী ছয়টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলার অনেক পরিবার নিজেদের ঘরে ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। খাউলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, তাঁর ইউনিয়নে পাঁচটি সড়ক পানির স্রোতে ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বহরবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টি এম রিপন জানান, তাঁর ইউনিয়নের পশ্চিম বহরবুনিয়া, উত্তর ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী গ্রামের দুই শতাধিক মৎস্য ঘের পানির নিচে।
লক্ষ্মীপুর :কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ১৭টি গ্রাম তিন দিন ধরে জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে মেঘনার পানি জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট বেড়ে যাওয়ায় দুই উপজেলার নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা কয়েক ঘণ্টা পানিবন্দি অবস্থায় থাকছে।
রামগতির চর আব্দুল্যাহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে চর গজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকশ একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা :বেড়িবাঁধের ভাঙনকবলিত অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে শ্যামনগরে পাঁচটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার নয়টি গ্রাম ডুবে যাওয়ার পর শনিবার নতুন করে এসব গ্রামে পানি ঢুকে। এতে চিংড়ি ঘের, কাঁকড়ার প্রজেক্ট, মিষ্টি পানির পুকুরসহ বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। কিছু কাঁচা ঘরও ধসে পড়েছে। বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের রঘুদাস মাঝি জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবার তাঁদের গ্রামে পানি ঢোকেনি। তবে শনিবার দুপুরের জোয়ারে বুড়িগোয়ালিনীসহ আশপাশের আরও চার গ্রামে পানি ঢুকেছে। পুরো এলাকা লবণ পানিতে ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সমকালের সংশ্নিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)