দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব। আমি আপনাদের স্পষ্ট করে জানাতে চাচ্ছি-১৪ সালের নির্বাচন আমাদের ওপর চাপাবেন না, ১৮ সালের নির্বাচনের দায় আমাদের ওপর চাপাবেন না। আমরা আমাদের নির্বাচনের দায় আমরা বহন করব। নির্বাচনটাকে অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করব এবং নিরপেক্ষা করতে। সবদলগুলো সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব।’
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সব দল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌঁড় দেন, তাহলে আমি কি করব? কাজেই আমরা সাহায্য করব। পুলিশের ওপর, সরকারে ওপর আমাদের কমান্ড থাকবে।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও মতৈক্য হয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি সৃষ্টি করবেন।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিষেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব।’
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা বহুবার বলেছি, যে সকল রাজনৈতিক দল বিশেষত প্রধানতম দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অবশ্যই বাধ্য করতে পারব না। তবে সকল দলকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে আমরা বারবার আহ্বান করে যাব। সে প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকেও আপনাদের মাধ্যমে সকল দলকে আহ্বান জানাচ্ছি সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দুর্নীতি, অর্থ শক্তির বৈভব ও পেশি শক্তির প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সকলের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা কাম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। একটি মাত্র দল ৩০০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা নেই। তবে ইতিহাস বলে সেক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা জাগিয়ে তুলবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ।’
সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিষেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও জানান সিইসি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, অরাজনৈতিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগত সংগঠিত হয়ে এগিয়ে এসে জাতির একটি সংকটময় মূহুর্তে তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রয়োগ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপে আহ্বান করে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। আমরা নির্বাচন করতে চাই অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ওপর। এ জন্য সকলের সহায়তা কাম্য।