উন্নত জীবন গঠনে উপদেশকারীর উপদেশ গ্রহণ করা যেমন আবশ্যক,তেমনি প্রয়োজন সমালোচনাকারীর সমালোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।সমালোচকের সমালোচনা যদি সত্য হয়,তবে মুমিন নিজেকে সংশোধন করে নেবে।আর তা যদি মিথ্যা হয়,তবে সতর্ক হয়ে চলবে।
নবীজি যেভাবে সমালোচনা গ্রহণ করতেন : মহানবী (সা.) মানুষের যৌক্তিক সমালোচনাকে পরামর্শ হিসেবে গ্রহণ করতেন এবং অন্যায় সমালোচনার ক্ষেত্রে হয়তো ধৈর্য ধারণ করতেন অথবা তার প্রজ্ঞাপূর্ণ উত্তর দিতেন।হাদিসে এসেছে,এক ইহুদি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল : আপনারা তো আল্লাহর সঙ্গে শরিক ও তাঁর সমকক্ষ স্থির করে থাকেন। আপনারা বলে থাকেন : যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন আর যা তুমি ইচ্ছা করো।আর আপনারা আরো বলে থাকেন : কাবার কসম! তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন যে,যখন কসম করার ইচ্ছা করবে,তখন বলবে : কাবার রবের কসম! আরো বলবে : আল্লাহ যা চেয়েছেন।এরপর তুমি চেয়েছ। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৭৭৩)
সমালোচক আয়নাস্বরূপ : সমালোচনাকারী হলো আয়নার মতো।মানুষ আয়না দেখে যেভাবে নিজেকে সংশোধন করে নেয়,সমালোচকের থেকে বুদ্ধিমান নিজে শুধরে নেয়।আর মুমিনের বৈশিষ্ট্য তো এমন যে সে সমালোচনা ছাড়াই অন্যকে দেখে দেখে নিজেকে সংশোধন করে নেয়।যেমনটি রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই।তারা একে অপরের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯১৮)
অন্যায় সমালোচনাও অর্থহীন নয় : অন্যায় সমালোচনাও ব্যক্তিকে কাজে সতর্ক এবং জীবন চলার পথে ধৈর্যশীল করে তোলে। আল্লামা ইবনে হাজম (রহ.) বলেন,প্রতিটি জিনিসেরই কিছু কল্যাণকর দিক আছে।মূর্খ ঝগড়াটের দ্বারাও আমি অনেক উপকৃত হয়েছি।নিশ্চয়ই তা আমার হৃদয় ও প্রকৃতিকে সুদৃঢ় করেছে,চিন্তাকে শাণিত করেছে এবং বোধ-বুদ্ধিকে জাগ্রত করেছে। (আল-আখলাকু ওয়াস সিয়ার, পৃষ্ঠা ১২৮)
কঠোরতার বিপরীতে নম্রতা : ইসলাম সমালোচকের কঠোর আচরণ ও ভাষার বিপরীতে নম্র আচরণ করতে বলে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,তোমরা উভয়ে নম্র ভাষায় কথা বোলো।হয়তো সে শিক্ষা গ্রহণ করবে অথবা ভয় পাবে। (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৪৪)
নিজেকে অন্যের সামনে পেশ করা : মনীষীরা অন্যের সমালোচনা বা অন্যের পতন থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেয়ে নিজেকে কোনো আল্লাহওয়ালা বুজুর্গের কাছে সমর্পণ করে নিজেকে সংশোধন করে নেওয়াকে উত্তম বলেছেন। আল্লামা খালিদ বিন জুমা আল-খাররাজ বলেন,যারা জীবনে উন্নতি প্রত্যাশা করে, বিশেষত যাদের সামনে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব আছে তারা যেন তাদেরকে সেসব ব্যক্তির সামনে পেশ করে এবং তাদের সান্নিধ্যে অবস্থান করে। অতঃপর তারা তাকে দেখবে,যাচাই করবে, তার দোষত্রুটিগুলো তাকে অবগত করবে এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান করবে। যেন সে নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারে।(মাউসুয়াতুল আখলাক, পৃষ্ঠা ৭৮)
আল্লাহ সবাইকে সমালোচকের সমালোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দিন। আমিন।