সরকার সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে গতকাল সোমবার থেকেই কার্যকর হওয়ার ঘোষণা দিলেও গতকাল খুচরা বাজারে দাম কমতে দেখা যায়নি। রাজধানীর ফকিরাপুল বাজারে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২০০ টাকা এবং পাঁচ লিটারের দাম ৯৮০ টাকা চাওয়া হয়। যদিও আগের দিনের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৮৫ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৯১০ টাকা এবং খোলা তেল ১৬৬ টাকা হওয়ার কথা।
গতকাল রাজধানীর আরো কয়েকটি বাজার ঘুরে দাম না কমার এই চিত্রই দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের নজরদারির অভাব এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা না গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
রাজধানীর ঢালি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের দামেই তেল বিক্রি করা হচ্ছে প্রায় সব দোকানে। গফুর স্টোরের বিক্রয়কর্মী বলেন, নতুন দর কার্যকর হতে কমপক্ষে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে। পাশের আরেকটি দোকানের বিক্রয়কর্মী বলেন, এক মাসও লাগতে পারে। কারণ কম্পানি নতুন তেল বন্দর থেকে খালাস করবে, উৎপাদনে যাবে; এরপর কারখানা থেকে ডিলার এবং ডিলার থেকে খুচরা পর্যায়ে আসবে। এর পরই দাম কমার ব্যাপার।
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর চন্দ্রিমা ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নজরদারির অভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। যেদিন থেকে কমানোর কথা, সেদিন বাজারে গিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে শাস্তির আওতায় আনা গেলে সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়ন সহজ হতো। ’
তবে কারওয়ান বাজারের মিজান স্টোরের মালিক হাজি মো. মিজান বলেন, তেলের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় মানুষ তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। বিকল্প ব্যবহারও বাড়ছে। তিনি গতকাল খোলা তেল লিটার বিক্রি করেছেন ১৭৬ টাকা এবং পাঁচ লিটার বিক্রি করেছেন ৮৮০ টাকা। তাঁর মতে, ‘সরকার ও মিডিয়ার আওয়াজে ব্যবসায়ীদের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দাম কমতে শুরু করেছে। ’ তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দর কমে যাওয়া এবং সরকারের তেলের দাম কমিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন ছিল আগে থেকেই। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।
কারওয়ান বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার আজ (গতকাল) থেকে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও আমি গতকালই পাঁচ লিটার তেল কিনেছি ৯৫০ টাকায়। ’
এদিকে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, আজ থেকে সারা দেশের বাজার নজরদারি শুরু করবেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া উৎপাদন পর্যায়েও নজরদারি করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ‘রবিবার মিল মালিক, ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে ভোজ্য তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয় এবং বলা হয়, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্যতালিকা প্রকাশ করা হবে, কিন্তু আমরা আজ (গতকাল) নতুন কোনো মূল্যতালিকা পেলাম না। সুতরাং আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছি কোন দামে তেল বেচাকেনা করব। আমরা ট্যারিফ কমিশনে যোগাযোগ করেছি, তারাও আমাদের চূড়ান্ত কিছু জানাতে পারেনি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘রবিবার বোতলজাত এক লিটার ১৮৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৬ টাকা এবং পাম অয়েল ১৫২ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা আগে থেকেই ১৫৭ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি খোলা সয়াবিন তেল। আজও আমরা ১৫৭ টাকা ৬১ পয়সা দরে খোলা সয়াবিন বিক্রি করেছি। ’
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের বিশ্ব বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ২৮০ ডলারের মধ্যে এবং প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েল ৯৮০ থেকে এক হাজার ৯৫০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত জ্যামিতিক হারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পাম তেলের টনপ্রতি মূল্য দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালের মে মাসের পর আন্তর্জাতিক বাজারে এ দুটি পণ্যের মূল্য কমতে থাকে। বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন এক হাজার ৩০০ ডলার এবং পাম এক হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে।