বিদায়ী সপ্তাহে ভিসা-নীতি নিয়ে ‘দুশ্চিন্তায়’ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ার বাজারে। সবকটি মূল্য সূচকের পাশাপাশি দৈনিক গড় লেনদেন ও বাজার মূলধন কমেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ নিয়ে গুজব ও অপপ্রচারে গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবারে শেয়ার বাজারে বড় দরপতন হয়। এরপরের তিন কার্যদিবসে মূল্য সূচক সামান্য বাড়লেও দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারেনি। গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৫ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৮৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ৫ পয়েন্ট ও ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫ পয়েন্ট কমেছে। বিদায়ি সপ্তাহে এই বাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮১৪ কোটি ৩৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৪ কোটি ৮১ লাখ।
৬০ হাজার টাকা অর্থাৎ ২ হাজার ১৯০ কোটি ৪৮ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে, যা শতাংশের হিসাবে ৫৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। লেনদেন কমার পাশাপাশি বিদায়ী সপ্তাহে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ৩৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ১১৪টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৫টির দর।
দেশের প্রধান এই শেয়ার বাজারে গত সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। বিদায়ি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস গত রবিবারে লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৯ হাজার ১০১ কোটি ৬৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২ টাকা। আর শেষ দিন বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৫ কোটি ৪৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৩ টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে বাজার মূলধন কমেছে নানা ১ হাজার ৬২৬ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩৯ টাকা। যা শতাংশের হিসেবে কমেছে দশমিক ২১ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো: ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, বিডিকম লিমিটেড, ফুওয়াং ফুড, জেমিনি সি ফুড, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ব্যাগ, ইস্টার্ন হাউজিং, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই সার্বিক সূচক ৮৪ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৫৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে এই বাজারে ৮৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ১০৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর।
শেয়ার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতির সঙ্গে শেয়ার বাজারের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকা নেই। অনেক কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোরপাইসে আটকা থাকায় বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারছে না। তবে বাজারের বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আমি ভালো শেয়ার ধরে রাখার পরামর্শ দেব।