দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।বিভিন্ন এলাকায় এক ঘণ্টা করে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হচ্ছে আজ।ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখাসহ সাশ্রয়ী ব্যবহারের নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।এরই মধ্যে ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরের ধনুয়া থেকে ময়মনসিংহ সদর পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।এ কেন্দ্রে উৎপাদিত ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধনুয়া থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে।বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।একনেকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।একনেকে অনুমোদন পেলে আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পটির আওতায় নির্মাণকাজ শুরু হবে।দুই বছর মেয়াদের প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে।প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৪ কোটি টাকা।এর মধ্যে ৪১৯ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে সরকার।বাকি ১৩৫ কোটি টাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব।গত ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল।
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় সিস্টেম লস কমিয়ে একটি দক্ষ ও সাশ্রয়ী উৎপাদন কাঠামো তৈরির মাধ্যমে সবার জন্য সাশ্রয়ী,নির্ভরযোগ্য,আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।সেই বিবেচনায় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকল্পটি অত্যন্ত সংগতিপূর্ণ বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ।এ কারণে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এ কে এম ফজলুল হক বলেন, প্রকল্পটির আওতায় ২০ ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে বিবিয়ানা থেকে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহে সব ধরনের কারিগরি ব্যবস্থা রাখা হবে।জ্বালানি বিভাগ থেকে গ্যাস সরবরাহে আগে থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল।বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পটিতে গ্যাস পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,সার্বিক পরিস্থিতির কারণে গ্যাস পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে।তবে এই প্রকল্পে এখনই গ্যাসের প্রয়োজন হচ্ছে না। দুই বছর পর গ্যাসের প্রয়োজন হবে।সে পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসতে পারে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,এই প্রকল্পের এলাকাগুলো হচ্ছে-গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ সদর,ভালুকা, গফরগাঁও ও ত্রিশাল উপজেলা।প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৮৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ২১৪ একর ভূমি রিকুইজিশন,ধনুয়া থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ১০০০ পিএসআইজি (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি গেজ) চাপের গ্যাস পাইপলাইন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ ও ইপিসি ভিত্তিতে টাউন বর্ডার স্টেশন স্থাপন ইত্যাদি।
এদিকে আজ একনেক সভায় আরও ছয়টি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।প্রস্তাবিত এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (লাইন ৬) (দ্বিতীয় সংশোধিত),৬৩৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের হাটহাজারী থেকে রাউজান পর্যন্ত সড়কাংশ চার লেনে উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধিত), ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় ইটাখোলা-মঠখেলা-কটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া-আড়াইহাজার-নরসিংদী-রায়পুরা আঞ্চলিক মহাড়ক যথাযথ মানে প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ,১৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইলেকট্রনিক ডাটা ট্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ট্ক্রিনিং কর্মসূচি (দ্বিতীয় সংশোধিত),৫৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদীভাঙন থেকে সংরক্ষণ এবং ১ হাজার ২৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প)।