মনসুর আলম খোকন
এখনো বাংলাদেশের অনেকেই বিশ্বাস করে নোবেল পুরস্কারটা কাজী নজরুল ইসলামেরই পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু চালাকি করে কূটচালের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটা নিয়ে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য নোবেল পান। সে সময় কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ১৪ বছরের বালক। ১৯১৩ সালে কবির খাতায় তাঁর নামই ওঠেনি।
আরেকটা ভ্রান্ত ধারণা,এদেশে অনেক মানুষের মনেই রয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে, ব্রিটিশ আমলে পাবনা মেন্টাল হাসপাতাল হওয়ার কথা ছিল ভারতের পাটনায়। কিন্তু লেখার সময় পাটনার স্থলে ভুলবশত পাবনা হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটি পাবনাতেই স্থাপিত হয়েছে। এটাও একেবারে ভিত্তিহীন কথা। কারণ, দেশ ভাগ হয়েছে ১৯৪৭ সালে। আর পাবনা মানসিক হাসপাতালটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৫৭ সালে।
নবাব সিরাজদ্দৌলা নাটোরের রাণী ভবানীর বিধ্ববা মেয়ে তারাসুন্দরীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, এ গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অনেকে বিশ্বাসও করেছিল। এখনো কেউ কেউ এ কথা বিশ্বাস করে থাকে। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পলাশীর যুদ্ধে রাণী ভবানী জনবল, অর্থকড়ি দিয়ে নবাবকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন।
ইংরেজ সেনাপতি হলওয়েল রচিত ‘ইন্ডিয়া ফ্যাক্টস’ নামক গ্রন্থে বর্ণিত অন্ধকূপ হত্যাকান্ড নামক মিথ্যা, বানোয়াট ঘটনাকেও লোকজন ৫০ বছর বিশ্বাস করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, ওই কারাগারে নবাব সিরাজ ১৪৬ জনকে বন্দি করে রেখেছিলেন। এক রাতেই সেখানে ১২৩ জন মারা গিয়েছিল। পরবর্তীতে ইংরেজ ঐতিহাসিক জেমস মিল তার ‘হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে সে ঘটনার সত্য উন্মোচন করেন। ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রস্থের একটি কক্ষে ১৪৬ জন লোককে রাখা মোটেও সম্ভব নয়।
মেজর ডালিমের স্ত্রীর ব্যাপারেও এখনো অনেকেই একটা কথা বিশ্বাস করে থাকে। এসব ভ্রান্ত ধারণা দূর হতে হয়তো আরও অনেক বছর লেগে যাবে। তবে বর্তমানের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে কিন্তু কোন মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার স্থায়িত্ব লাভ করতে পারছে না। আবার সত্যকেও চাপিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কেউ না কেউ সেটা প্রকাশ করে দিচ্ছে।
লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।