আজ শুরু বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই। ২২ গজের লড়াইয়ের উত্তাপে গা মাখছে ক্রিকেটবিশ্ব। কোন দলের কতদূর যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই আলোচনাও চলছে। ভারতের আসরে অংশ নেওয়া ১০ দলের শক্তি-দুর্বলতা ও সম্ভাবনা নিয়েই এই আয়োজন। আজ থাকছে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে-
কাছে তবু কত দূরে- কথাটা নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের সঙ্গে খুব যায়। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি। আর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ তো তাদের ক্রিকেট ইতিহাসেই চরম হাহাকার হয়ে আছে। লর্ডসের নাটকীয় ফাইনালে বেশি বাউন্ডারি মারায় চোখের সামনে দিয়ে ট্রফি নিয়ে যায় ইংল্যান্ড। চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যে নির্মম হারের ক্ষত বুকে চেপে রাখতে হয় কিউইদের। দুটো বিশ্বকাপ তো দ্বিতীয় হয়েই শেষ করতে হয়েছে। এবার কি বিশ্বকাপ-ভাগ্য খুলবে নিউজিল্যান্ডের?
দলটা প্রায় একই আছে। রস টেলর কেবল নেই। ব্যাটিংয়ে আশার বাতি হয়ে এখনও আছেন কেন উইলিয়ামসন। সঙ্গী হয়েছে ডেভন কনওয়ে, টম ল্যাথাম, ড্যারিল মিচেলদের ব্যাটের আলো। বোলিংটা আছে আগের মতোই। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপের ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদি জুটি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে পেস বোলিংয়ের দায়িত্ব। অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্সে নিউজিল্যান্ড বরং এখনও আর বেশি পরিণত।
বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে কিউইরা। বিশ্বকাপ দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ছিলেন না সেখানে। তারপরও বাংলাদেশকে হারিয়ে ভারতে গিয়েছে ক্রিকেটের মহাযুদ্ধে। আত্মবিশ্বাস তাদের বেড়েছে আরও বেশি। এবার মূল মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার পালা।
ভারতে যেহেতু বিশ্বকাপ, তাই আইপিএলের কথা এখানে আসবেই। নিউজিল্যান্ড দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের ভারতীয় ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেই জায়গা থেকে দেখলে বিশ্বকাপে তাদের সুবিধা পাওয়ার কথা। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের ফাইনাল হার মুছে ফেরার মোক্ষম সুযোগ এবারের বিশ্বকাপে।
একনজরে:
অধিনায়ক: কেন উইলিয়ামসন।
কোচ: গ্যারি স্টিড।
ডাকনাম: ব্ল্যাক ক্যাপস, কিউই।
র্যাংকিং: ৬।
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: ১২ বার (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫, ২০১৯)।
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: রানার্স-আপ ২০১৫ ও ২০১৯।
আগের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স
হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা বিশ্বকাপ ট্রফিটা মুহূর্তেই ফসকে যায়। নির্মম নিয়মের বলি নিউজিল্যান্ড। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল মঞ্চায়িত হয়েছিল। ম্যাচের পর সুপার ওভার ‘টাই’। ফল নিষ্পত্তি হয় তখন বিতর্কিত এক নিয়মে। ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি মারার সংখ্যায় চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বিপরীতে কান্নায় ভেজে কিউইদের চোখ। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ফাইনালে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল উইলিয়ামসনদের। গত আসরে কষ্টের নদী বয়েছে আরও বেশি দূর।
কীভাবে বিশ্বকাপে: ওয়ানডে সুপার লিগের সেরা আট দল সরাসরি নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপের রানার্স-আপ নিউজিল্যান্ড পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে পায় ভারতের টিকিট।
নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ সূচি
৫ অক্টোবর: ইংল্যান্ড (আহমেদাবাদ), দুপুর ২-৩০ মিনিট
৯ অক্টোবর: নেদারল্যান্ডস (হায়দরাবাদ), দুপুর ২-৩০ মিনিট
১৩ অক্টোবর: বাংলাদেশ (চেন্নাই), দুপুর ২-৩০ মিনিট
১৮ অক্টোবর: আফগানিস্তান (চেন্নাই), দুপুর ২-৩০ মিনিট
২২ অক্টোবর: ভারত (ধর্মশালা), দুপুর ২-৩০ মিনিট
২৮ অক্টোবর: অস্ট্রেলিয়া (ধর্মশালা), সকাল ১১টা
১ নভেম্বর: দক্ষিণ আফ্রিকা (পুনে), দুপুর ২-৩০ মিনিট
৪ নভেম্বর: পাকিস্তান (বেঙ্গালুরু), সকাল ১১টা
৯ নভেম্বর: শ্রীলঙ্কা (বেঙ্গালুরু), দুপুর ২-৩০ মিনিট
নজরে থাকবেন
কেন উইলিয়ামসন: ইনজুরিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল উইলিয়ামসনের বিশ্বকাপ। খেলতে পারবেন না বলেও শোনা গিয়েছিল। তবে বিশ্বকাপ দলে তিনি শুধু আছেন তা নয়, নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্বও দেবেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়া একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে এবারের আসরে টিকে আছেন তিনি। বাকি দলগুলোর অধিনায়ক পাল্টালেও কিউই ব্যাটসম্যান দায়িত্ব ধরে রেখেছেন।
বিশ্বকাপে বরাবরই দুর্দান্ত উইলিয়ামসন। অন্যান্য সময় ওয়ানডেতে তার গড় যেখানে ৪৭.৮৩, বিশ্বকাপে সেটি ৫৬.৯৩। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ দারুণ কেটেছিল ব্যাট হাতে। ভারতের মাটিতে সেই ধারা ধরে রাখার প্রত্যাশা তার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ তো আছেই। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই টানা দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড।
ডেভন কনওয়ে: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন দেরিতে। তবে এসেই চমকে দিয়েছেন ডেভন কনওয়ে। এখন নিউজিল্যান্ড দলের অন্যতম স্তম্ভ এই ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকবে কিউইরা। এমনিতেই জাতীয় দলে নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছেন, তার ওপর বিশ্বকাপ ভারতে হওয়ায় কনওয়ের কাছে বাড়তি চাওয়া থাকা স্বাভাবিক। কারণ আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে তার পারফরম্যান্স ঈর্ষণীয়। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের দিকে আলাদা নজর রাখতেই হবে।
শক্তি
কেন উইলিয়ামসনের অভিজ্ঞতা।
দুর্দান্ত পেস আক্রমণ। নতুন বলের জুটি টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে আছেন লকি ফার্গুসন ও ম্যাট হেনরি।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা নিউজিল্যান্ড ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেছে ফাইনালে। অনেকদিন ধরে খেলা তারকাদের সঙ্গে নতুনরা মানিয়ে নিয়েছেন দ্রুত।
ড্যারিল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস ও টম ল্যাথামদের নিয়ে সময়ের অন্যতম সেরা মিডল অর্ডার।
কার্যকরী ব্যাট করতে পারেন মিচেল স্যান্টনার ও রাচিন রবীন্দ্র। তাদের স্পিন ভারতের মাটিতে ভরসা।
দুর্বলতা
চোট কাটিয়ে লম্বা সময় পর ক্রিকেটে ফিরেছেন উইলিয়ামসন। তার ফিটনেসে এখনও ঘাটতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।
একাই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন- এমন খেলোয়াড়ের অভাব।
বড় ম্যাচে ব্যর্থতার অনেক উদাহরণ আছে তাদের।
ভবিষ্যদ্বাণী: ফাইনাল
নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টম ল্যাথাম, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ড্যারিল মিচেল, ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র, উইল ইয়াং, গ্লেন ফিলিপস, লকি ফার্গুসন, মার্ক চ্যাপম্যান, জিমি নিশাম, ম্যাট হেনরি, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি।