মনসুর আলম খোকন
আনারকলির আসল নাম নাদিরা বেগম। কোথাও তাকে বর্ণনা করা হয়েছে শার্ফ-উন-নেসা নামে। ঐতিহাসিকরা তাকে তুর্কমেন বংশোদ্ভূত বলেছেন। যদিও কোনও কোনও ঐতিহাসিক মনে করেন, তিনি পারসিয়ান ছিলেন। কারও মতে, আনারকলি ইতালীয় রক্ত ঐতিহ্যের অধিকারী।
প্রাপ্ত ঐতিহাসিক বিবরণ অনুযায়ী, এক বণিক দলের সঙ্গে ইরান থেকে তৎকালীণ মুঘল রাজধানী লাহোর আসে নাদিরা বানু। সেখান থেকে মুঘল হেরেমে। মুঘল হেরেমের আরও অনেক ‘কানিজ’ বা যৌবনবতী নারীর মতো আনারকলিও ছিলো একজন। তবে সে ছিলো অনেকের চেয়ে স্বতন্ত্র। নাচে,গানে পটিয়সী। তার গায়ের রং ডালিম বা আনারের ফুলের মতো সুন্দর ছিল। মুগ্ধ সম্রাট আকবর নিজেই তার নাম দিয়েছিলেন ডালিম ফুল বা আনারকলি।
আনারকলির জন্ম-বৃত্তান্ত ও জীবন-কাহিনী সম্পর্কেও একাধিক তথ্য জানা যায়। একটি বিবরণ এমন যে, আনারকলি ছিলো এক ইতালীয় সওদাগরের সুন্দরী কন্যা। পিতার সঙ্গে আফ্রিকার উত্তর উপকূল থেকে সওদাগরী জাহাজে সেও যাত্রাসঙ্গী ছিলো। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। সফরের এক পর্যায়ে জাহাজ জলদস্যু কবলিত হয়। পাষ- দস্যুদল জাহাজের সবাইকে হত্যা ও লুটপাট করলেও সুন্দরী আনারকলিকে হত্যা না করে ইস্তাম্বুলের ক্রীতদাস বাজারে মোটা টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে এক পতিতালয়ের মালিক তাকে কিনে নিয়ে যায় এবং পুরুষদের মনোরঞ্জনের জন্য উপযুক্ত নৃত্য, গীত ও ছলাকলা শিক্ষা দেয়।
পতিতালয়ের মালিক কিছুদিন পর আরও বেশি দামে আনারকলিকে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে। সেই ব্যক্তি তাকে কিছুদিন নিজের কাছে রাখে এবং পরে নানাবিধ সুবিধা লাভের আশায় তুরস্কের সুলতানকে নজরানা দেয়।
সেখানে কয়েক বছর অবস্থানের পর আনারকলিকে তুরস্কের সুলতান মুঘল সম্রাট আকবরকে উপহার স্বরূপ পাঠান। তবে, ঘটনা যা-ই হোক না কেন,ঘটনাচক্রে আনারকলি মুঘল সম্রাট আকবরের হেরেমে স্থান লাভ করে। অনেকের মতে, আকবর তাকে নিজের শয্যাসঙ্গী করেছিলেন।
আবার, অধিক প্রচারিত ভাষ্য হলো, আকবর-পুত্র শাহজাদা সেলিম আনারকলির প্রেমে পড়েন। হেরেম থেকে গোপনে বাইরে এনে শাহজাদা সেলিম প্রণয়ে মত্ত হতেন এবং অভিসারেও যেতেন আনারকলিকে নিয়ে। এ খবর আকবরের কানে আসার পর তিনি ছেলে যুবরাজ সেলিমকে আনারকলির সাথে বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে একমাত্র পুত্রকে আফগানিস্তানে নির্বাসনে পাঠান। তবে সম্রাট আকবরের অনিচ্ছায় শাহজাদা সেলিম ও আনারকলির প্রেম সফল হয় নি এবং আকবরের নির্দেশে আনারকলিকে একটি গোপনকক্ষে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিল এমন কিংবদন্তী রয়ে গেছে।
লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।