শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে চলছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই। ২২ গজের লড়াইয়ের উত্তাপে গা মাখছে ক্রিকেটবিশ্ব। কোন দলের কতদূর যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই আলোচনাও চলছে। ভারতের আসরে অংশ নেওয়া ১০ দলের শক্তি-দুর্বলতা ও সম্ভাবনা নিয়েই এই আয়োজন। আজ থাকছে আফগানিস্তানকে নিয়ে-
ভুলে যাওয়ার মতো একটা বিশ্বকাপ কেটেছিল ২০১৯ সালে। কোনও জয় ছাড়া বিশ্বকাপ শেষ করে আফগানিস্তান। ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চের সেই হতাশা কাটানোর মিশনে এবার রশিদ খান-মোহাম্মদ নবীরা। ভারতের চেনা কন্ডিশনে হবে কি আফগান-রূপকথা?
আফগানিস্তানের তারকা খেলোয়াড়দের প্রায় সবাই খেলেন আইপিএলে। ভারতের এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে ছুটে চলতে হয় তাদের। সেখানেই এবারের বিশ্বকাপ। তার ওপর আবার আফগানদের ‘ঘরের মাঠ’ এই ভারতে। তাহলে বুঝুন কন্ডিশনের সুবিধায় কতটা এগিয়ে হাশমতউল্লাহ শহীদিরা।
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় তারকা নিঃসন্দেহে রশিদ। তাদের মূল শক্তির জায়গাটাও স্পিন। রশিদের সঙ্গে আছেন মুজিব উর রহমান ও নবী। পেস বোলিংয়ে ফজলহক ফারুকী ও নাভিন উল হকও ভড়কে দিতে পারেন ব্যাটসম্যানদের। মোটা দাগে আফগানদের সবচেয়ে অস্ত্র বোলিং।
ব্যাটিংয়েও পিছিয়ে নেই খুব একটা। রহমানউল্লাহ গুরবাজের ব্যাটিং তাণ্ডব যেকোনও দলের জন্য বিপদ সংকেত। ইব্রাহিম জাদরান কিংবা নাজিবউল্লাহ জাদরানের সামর্থ্য আছে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার। আর মিডল অর্ডারে ব্যাটে ঝড় তোলার জন্য তো আছেনই নবী।
২০১৯ বিশ্বকাপের অনেকেই নেই। নতুন যারা এসেছেন, খেলছেন অনেকদিন থেকে। রশিদ-নবীদের সঙ্গে তারাও গুছিয়ে নিয়েছে দলটিকে। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা ঝেড়ে ভারতের মাটিতে রূপকথা লিখতেই পারেন আফগানরা।
একনজরে:
অধিনায়ক: হাশমতউল্লাহ শহীদি।
কোচ: জোনাথান ট্রট।
ডাকনাম: আফগান।
র্যাংকিং: ৯।
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: ২ বার (২০১৫ ও ২০১৯)।
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: গ্রুপ পর্ব ২০১৫ ও ২০১৯।
আগের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ মোটেও ভালো কাটেনি আফগানিস্তানের। ইংল্যান্ডের আসরে কিছুই করতে পারেনি তারা। রবিন রাউন্ড পর্বে ৯ ম্যাচ খেললেও জয় নেই একটিতেও। একমাত্র দল হিসেবে কোনও ম্যাচ না জিতে তলানিতে থেকে শেষ করেছিল বিশ্বকাপ।
কীভাবে বিশ্বকাপে: ওয়ানডে সুপার লিগের সেরা আট দল সরাসরি নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপ। আফগানিস্তান পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে থেকে পায় ভারতের বিশ্বকাপের টিকিট।
আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ সূচি
৭ অক্টোবর: বাংলাদেশ (ধর্মশালা), সকাল ১১টা
১১ অক্টোবর: ভারত (দিল্লি), দুপুর ২-৩০ মিনিট
১৫ অক্টোবর: ইংল্যান্ড (দিল্লি), দুপুর ২-৩০ মিনিট
১৮ অক্টোবর: নিউজিল্যান্ড (চেন্নাই), দুপুর ২-৩০ মিনিট
২৩ অক্টোবর: পাকিস্তান (চেন্নাই), দুপুর ২-৩০ মিনিট
৩০ অক্টোবর: শ্রীলঙ্কা (পুনে), দুপুর ২-৩০ মিনিট
৩ নভেম্বর: নেদারল্যান্ডস (লখনউ), দুপুর ২-৩০ মিনিট
৭ নভেম্বর: অস্ট্রেলিয়া (মুম্বাই), দুপুর ২-৩০ মিনিট
১০ নভেম্বর: দক্ষিণ আফ্রিকা (আহমেদাবাদ), দুপুর ২-৩০ মিনিট
নজরে থাকবেন
রশিদ খান: শুধু আফগানিস্তান নয়, ক্রিকেট বিশ্বেরই অন্যতম সেরা স্পিনার রশিদ খান। দুর্দান্ত স্পিনে নিজের জায়গা শক্ত করে নিয়েছেন তিনি। তার বোলিংয়ের সামনে বিশ্বের নামি ব্যাটসম্যানও খেই হারায়। এবারের বিশ্বকাপ আবার ভারতে। বলার অপেক্ষা রাখে না চেনা কন্ডিশনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তিনি। আইপিএল খেলার কারণে ভারতের সব মাঠই তার চেনা। আফগানদের মুখোমুখি হওয়ার আগে সব দলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হবেন রশিদ। তাকে নজরে না রেখে উপায় আছে!
রহমানউল্লাহ গুরবাজ: যেদিন তার ব্যাটে ঝড় উঠবে, সেদিন সব বোলারই সাধারণ মানের। রহমানউল্লাহ গুরবাজ তার সামর্থ্যের প্রমাণ অনেক ম্যাচে দেখিয়েছেন। আফগানিস্তানের ভালো শুরুর ভিত গড়ে দিতে হবে তাকে। ভারতের কন্ডিশন তার এমনিতেই চেনা। তার ওপর নিজেকে আরও শাণিত করেছেন আইপিএল খেলে। প্রতিপক্ষের নজরে অবশ্যই থাকবেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
শক্তি
* স্পিন আক্রমণ আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় শক্তি।
* রশিদ খানের মতো বিশ্বসেরা স্পিনারের সঙ্গে আছেন মুজির উর রহমান ও মোহাম্মদ নবীর মতো কার্যকরী স্পিনার।
* রহমানউল্লাহ গুরবাজ আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। এই ব্যাটসম্যানের দিনে যেকোনও দলই পড়তে পারে বিপদে।
দুর্বলতা
* টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শক্তিশালী হয়ে উঠলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনও তেমনটা হতে পারেনি তারা।
* ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে।
* বোলিং লাইন শক্তিশালী হলেও ভুগতে হতে পারে ব্যাটিং নিয়ে।
ভবিষ্যদ্বাণী: প্রথম পর্ব।
আফগানিস্তান স্কোয়াড: হাশমতউল্লাহ শহীদি (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবী, নূর আহমেদ, ফজলহক ফারুকী, আব্দুল রহমান, নাভিন উল হক, ইকরাম আলিখিল, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান।