ইসরায়েলের চরম নৃশংসতার শিকার থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশু ও নারীরাও। গত পাঁচ দিনের অব্যাহত হামলায় চার শতাধিক শিশুর প্রাণ গেছে। প্রায় ২৫০ নারী অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু তার পরও ইসরায়েলের হামলা থামছে না। এমনকি গাজায় খাবার সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। জিম্মিদের মুক্তি না দিলে এগুলোর কোনো কিছুই গাজায় সরবরাহ না করার অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। ফলে গাজায় মানবিকসংকট গভীর হয়েছে। হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হচ্ছে।
শিশুদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি!
গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পত্রিকা জানিয়েছে, গত রবিবার থেকে ইসরায়েলের হামলায় ১ হাজার ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শিশুই ৪৪৭ জন এবং নারীর নিহতের সংখ্যা ২৪৮ জন। কোনো বিরতি ছাড়াই গাজায় চারদিক থেকে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় ৪ হাজার টনের ছয় হাজার বোমা নিক্ষেপ করেছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠছে
টানা পাঁচ দিন ধরে ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং অবরোধের মধ্যে থাকার পর গাজার মানবিক পরিস্থিতি ক্রমে মরিয়া হয়ে উঠছে। রেডক্রস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জ্বালানির সংকটের কারণে গাজার হাসপাতালগুলো মর্গে বা মৃতদেহ রাখার স্থানে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। এসব হাসপাতাল এখন জেনারেটর দিয়ে চলছে। কিন্তু আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে। তবে ইসরায়েল বলেছে, জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি বা পানিও দেওয়া হবে না। অন্তত ১৫০ মানুষকে হামাস সদস্যরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুেকন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার আহত রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক দিনেই গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১৫১ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দেশটিতে এখনো পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ জন জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর এর জবাবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজাতে ১ হাজার ৪১৭ জন নিহত হয়েছেন। জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গাজার একমাত্র বিদ্যুেকন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে গাজার লাখো বাসিন্দা বিদ্যুিবহীন হয়ে পড়েছেন। গাজার বেশির ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ইসরায়েল থেকে। তবে গাজার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এক নারী বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে বহু বছর যাবত্ আমরা বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার সমস্যায় রয়েছি।’ হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ ছাড়াও খাদ্য এবং পানিসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় ত্রাণ এবং ওষুধ সরবরাহ করার জন্য নিরাপদ করিডর দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে গাজা ত্যাগের করিডর দেওয়ারও দাবি উঠেছে। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় কমপক্ষে ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বাইডেনের হুমকি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইরান যেন সতর্ক থাকে। আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান ইসরায়েলের কাছে পৌঁছে গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইরানকে সতর্ক থাকার হুমকি দিয়েছেন বাইডেন। বুধবার হোয়াইট হাউজে ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের বাইডেন বলেছেন, হামাস যে আক্রমণ করেছে, তা চরম নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু নয়। ইসরায়েলের প্রতি তার আবেদন, তারা যেন সংঘাতের নিয়ম মেনে চলে। ইরান হামাসকে অর্থ ও সামরিক সাহায্য দেয় বলে অভিযোগ। হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, জার্মানিসহ অনেক দেশ সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় রেখেছে।
ইরানি প্রেসিডেন্ট ও সৌদি যুবরাজের ফোনালাপ
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বুধবার টেলিফোনে ইসরায়েল-গাজা সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছেন।