সাকিব আল হাসান ও রাচিন রবীন্দ্র। দুজনেই বাঁহাতি স্পিনার। দুজনেই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। তবে এককভাবে বোলিং লড়াইও নয়, ব্যাটিং লড়াইও নয়, আজ চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে জমে উঠতে পারে দুজনের অন্য লড়াই। সেটা কী? ব্যাটসম্যান রাচিন রবীন্দ্র। বনাম বোলার সাকিবের বিপরীতমুখী লড়াই।
দুজনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ১৩। রাচিন রবীন্দ্রর বয়স সবে ২৩। সাকিবের বয়স ৩৬। বয়সের ফারাকের চেয়ে দুজনের অভিজ্ঞতার ফারাক আরও বেশি। সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতাচ্ছেন ১৭ বছর ধরে। এ পর্যন্ত খেলেছেন ৬৬টি টেস্ট, ২৪২টি ওয়ানডে ও ১১৭টি টি-টোয়েন্টি। এ নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক খেলছেন পঞ্চম বিশ্বকাপ। সেই ৫ বিশ্বকাপে সাকিব খেলে ফেলেছেন ৩১টি ম্যাচ। বিপরীতে রাচিন রবীন্দ্রার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০২১ সালে টেস্ট দিয়ে। এ পর্যন্ত ৩টি টেস্ট খেলা রাচিনের ওয়ানডে অভিষেক এ বছরই (২০২৩ সালের মার্চে)। সেই থেকে এ পর্যন্ত খেলেছেন ১৪টি ওয়ানডে। বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ গায়ে মাখছেন এবারই প্রথম। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলেছেন দুটি ম্যাচ।
সেই দুটি ম্যাচ দিয়েই তারকা বনে গেছেন রাচিন। এবং সেটা ব্যাট হাতে বিশেষ কারিশমা দেখিয়ে। ১২টি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে নেমেছেন। বিশ্বকাপের আগে খেলা সেই ১২ ম্যাচের মধ্যে ৮ বার ব্যাটিং করতে নামার সুযোগ পান কিউই তরুণ। এর মধ্যে ৬ বারই ব্যাটিং করেন ৭ নম্বরে। বাকি ২ বার ৬ নম্বরে। ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সও তেমন উল্লেখ করার মতো ছিল না। ৮ ইনিংসে তার মোট রান ছিল ১৮৯। সর্বোচ্চ ৪৯। কিন্তু ভারত বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এই অনভিজ্ঞ তরুণকে নিয়েই বড় একটা জুয়া খেলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে নামিয়ে দেন ৩ নম্বরে!
সেটাও ২৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ১০ রানেই প্রথম উইকেট হারানোর পর! তরুণ রাচিন অধিনায়কের আস্থার মর্যাদা রাখেন বিস্ময়করভাবে। দলকে ৯ উইকেটের জয় উপহার দেওয়ার পথে এই তরুণই খেলে বসেন ৯৬ বলে অপরাজিত ১২৩ রানের ইনিংস। ইংলিশ বোলারদের তুলোধুনো করতে ৫টি ছক্কা ও ১১ চার মারেন তিনি। বিস্ময়কর ইনিংসটির পথে গড়েছেন নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বিশ্বকাপে দ্রুততম (৮২ বলে) সেঞ্চুরির রেকর্ড। পরে বল হাতেও নেন ১টি উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচেই পান ম্যাচ-সেরার পুরস্কার। তার পুরস্কার হিসেবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেও ৩ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন রাচিন। এবারও সফল। দলকে জয় উপহার দিতে খেলেছেন ৫১ বলে ৫১ রানের ইনিংস।
আজ বাংলাদেশের বিপক্ষেও যে রাচিনকে ৩ নম্বরেই ব্যাটিং করাবে নিউজিল্যান্ড, সেটি অনুমিতই। আর উড়তে থাকা রাচিনকে মাটিতে নামানোর চ্যালেঞ্জটা প্রথমে থাকবে সাকিবের কাঁধেই। বর্তমানে বাংলাদেশ দলে ম্যাচজয়ী বোলার আরও অনেকেই আছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে আউট করার প্রশ্নে বল হাতে সাকিবই বাংলাদেশের সেরা ভরসা। সাকিবও নিশ্চয় চাইবেন পথের এই কাঁটা হয়ে ওঠার আগেই উপড়ে ফেলতে! এবারের বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সাকিবের শুরুটা ভালো না হলেও বল হাতে দুই ম্যাচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। আজ চেন্নাইয়ে রাচিনের উইকেটটিই হবে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেট এবং তা সাকিবের জন্যও।