চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পণ্য ও সেবাখাতে রেকর্ড ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।এতে গত অর্থবছরের চেয়ে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।করোনা মহামারী মোকাবেলা এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সঙ্কটের মুখে গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রফতানি করে বাংলাদেশ।এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করছে সরকার।বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নতুন অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।ওই সময় তিনি জানান,বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে।এছাড়া রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জনের গতিধারা,পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে সরকারের দেয়া আর্থিক সুবিধা,রাশিয়া – যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা,দেশে করোনার প্রভাব,রফতানি সম্ভাবনাময় পণ্য ও সেবা খাতের বিকাশ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।তিনি বলেন,আগের বছরের প্রকৃত আয় থেকে ১১.৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে নতুন অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।আর সেবাখাতে ১২.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৯ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।সামগ্রিকভাবে পণ্য ও সেবা খাত মিলে মোট ৬৭ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হবে আশা করা যাচ্ছে।দেশের প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাক খাতের বিষয়ে তিনি আরও জানান,এ শিল্পখাত নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।সারাবিশ্বেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা ও কদর বেড়েছে।এ খাতের রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫.৪৭ ভাগ।মোট রফতানির সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
আশা করা হচ্ছে,আগামীতেও এ খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।এ ছাড়া,কৃষি খাত,চামড়া খাত,পাট খাত,হোম টেক্সটাইল খাতের রফতানি ইতোমধ্যে প্রতিটি খাতে এক বিলিয়নের বেশি হয়েছে।আইসিটি,লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ প্রায় ৮-১০টি খাতের রফতানি বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।বিশেষ করে আইসিটি খাতের রফতানি ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখায় নতুন নতুন বাজার পাচ্ছে পোশাকখাত।জিএসপি বহাল না হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের রফতানি বাড়ছে।এছাড়া অন্যান্য দেশেও রফতানি ভাল।এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী তৈরি পোশাক রফতানি হবে।২০০৮ সালের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন,শুনেছি,পোশাক খাতের খারাপ দিন আসবে।কিন্তু সবার মুখে চুনকালি দিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে এগোচ্ছি।টিপু মুনশি বলেন,২০২১-২২ সালে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার।এর বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে ছয় হাজার কোটি ডলারের বেশি।বৈশ্বিক বাজার চীন থেকে কিছুটা সরে যাওয়ার কারণে এটা হয়েছে।এছাড়া করোনার কারণে দুই বছর মানুষ সাশ্রয়ী ছিল।দুই বছর পর করোনা অনেকটা স্তিমিত হওয়ায় মানুষের মধ্যে কেনাকাটার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।দুই বছরের কৃচ্ছ্রর কারণে যে চাহিদা পুঞ্জীভূত হয়েছে,তারা এখন সেই চাহিদা মেটাচ্ছে।তিনি বলেন,অনেক পণ্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগোচ্ছে না,তারপরও কোথাও নেতিবাচক কিছু নেই। উল্লেখ্য,২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১২ মাসে বাংলাদেশে থেকে পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়,যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি হয়েছে।আর সেবা খাতে গত অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ,যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।