‘হোটেলে গেলাম কিছুতেই আর ঘুমাতে পারছিলাম না। সারাটা রাত সেই স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে। আমি খুবই তুচ্ছ একজন মানুষ। অথচ এই ব্যক্তিত্বসম্পন্না ভদ্রমহিলা আমাকে কোথায় তুলে দিলেন! আমি কি সত্যিই এর যোগ্য? এই প্রশ্ন শুধু সেই রাত নয়, পরের দিন নয়, এখন পর্যন্ত আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে এমনটাই লিখেছেন বাংলাদেশের নন্দিত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ।
কী সেই স্মৃতি, যা এখনো জুয়েল আইচকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে? সেই ঘটনাও এই পোস্টে তুলে ধরেছেন এই জাদুশিল্পী।
গত ৭ অক্টোবর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন এবং আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের নন্দিত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। বক্তৃতাশেষে যখন তিনি যখন বেরিয়ে আসছিলেন তখন তার সামনে পেছনে নানান বয়সী মানুষের মিছিল। কেউ চাইছেন ছবি তুলতে আর কেউ ভলান্টিয়ারের মতো এগিয়ে এসেছেন তাকে এই ভীড় থেকে রক্ষা করতে।
এই সময় হঠাৎ একজন হলুদ শাড়ি পরা মাঝবয়সী নারী এগিয়ে আসেন জুয়েল আইচের দিকে। তার মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। এই নারী জুয়েল আইচকে বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে আসিনি, আপনি আমার বাংলাদেশ।’ এই কথা বলেই একদম মায়ের মত জুয়েল আইচকে জড়িয়ে ধরেন এবং কাঁদতে থাকেন। তার এই কান্না যেন থামছেই না। এই নারীর এই ঘটনা আশেপাশের সবাইকে স্তব্ধ করে দেয়। সবাই তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।
এরপরের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে জাদুশিল্পী লেখেন, ‘আমি পরম শ্রদ্ধায় তাঁর মাথায় এবং পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ধীরে ধীরে তাঁর কান্না থেমে এলো। আশেপাশের লোক কাছে এসে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁকে এবং আমাকে দেখতে লাগলেন। এমন দৃশ্য এর আগে আমি এবং তাঁরা কেউই কখনো দেখিনি বা দেখেননি। আমি তারপরে যা কিছুই করেছি সবটা জুড়ে মায়ের মত এই ভদ্রমহিলা আমার সমস্ত সত্তাকে আবিষ্ট করে রাখলেন।’
তার জাদুর কারিশমা দেখে হতবাক হয়ে যায় দর্শক। কিন্তু এবার তাকেই নিউইয়র্কে হতবাক করলেন এক নারী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার কথা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হলভর্তি দর্শক পিন-পত্তন নিস্তব্ধতা, কখনো অট্ট হাসিতে এবং প্রচন্ড হাততালিতে ছাদ ফাটিয়ে ফেলার মত পরিস্থিতি তৈরি করলেন। আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এতো ভালোবাসা আমি কোথায় রাখি!