কাজী নওশাবা আহমেদ। অভিনয় জীবনে বিস্তৃত কাজ করলেও নিজেকে নিয়ে এখনও ভাবেন নিবিষ্টভাবেই। হয়তো ম্যাচিউরিটির একটা পর্যায়ে এসেই একজন শিল্পী তার অ্যাভারেজ কাজগুলোকে না করতে শেখে। সম্প্রতি মঞ্চ, ওটিটি বা চলচ্চিত্র সবগুলোতেই সরব হয়েছেন। কলকাতায় আবির চট্টোপাধ্যায়ের সাথে করছেন নতুন একটি সিনেমা। সাম্প্রতিক কাজ ও ভাবনাগুলো শেয়ার করলেন ।
কলকাতার মুভিতে কাজ করছেন। একইসাথে গত কয়েক বছরের তুলনায় আপনি নিজের কাজও কমিয়ে এনেছেন। এর কারণটা কী?
অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেয়া। আর কখনও এভাবে অ্যাভারেজ কাজ করব না। অনেক করেছি। দরকার হলে ঘরে বসে থাকব। কিন্তু নিজের শিল্পীসত্তার অপমান হয় এমন কাজ করব না।
টরন্টোতে আপনার অভিনীত ‘মেঘনা কন্যা’ সিনেমার প্রিমিয়ার হলো- এসব সাফল্য কীভাবে দেখেন…
খুবই ভালো লাগে। নিজের সিনেমার প্রথম প্রদর্শনী আইএফএফএসএতে হচ্ছে। শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে না পারলেও মন সেখানেই থাকবে। শিগগির দেশেও মুক্তি পাবে মেঘনা কন্যা। যেকোনো সাফল্যই একজন শিল্পীর কাছে পরবর্তী আরেকটি ভালো কাজের শক্তি দেয়।
তার মানে পেশাদার শিল্পী হিসেবে আপনি এখন কাজ করছেন না!
দেখুন পেশাদার শিল্পী মানে যদি হয়- আমার কোনো স্ক্রিপ্টে কোনো গুরুত্ব নেই, অথচ ৪/৫টি সিকোয়েন্সে কাজ করতে হবে। কাজের সংখ্যা আর ডেট গুনে দৈনিক ইনকামের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলে সেই পেশাদার শিল্পী আমি হতে চাই না। আমি এমন কিছু কাজে নিজেকে জড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম।
সে কারণেই কি মঞ্চের প্রতি এই নতুন আগ্রহ জন্মাল?
আগ্রহ অনেক পুরোনো। অভিনয়টাই যেহেতু জানি এবং করতে ভালোবাসি। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করলাম, যেহেতু নিজের মনের মতো চরিত্র পাচ্ছি না বা অযথা কাজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করব না। তাই শিল্পী হিসেবে এক মঞ্চে ২/৩ ঘণ্টা অভিনয় করার শক্তি-ইচ্ছে চেষ্টা তো আমার আছে। সেটিই করার চেষ্টা করলাম। তাতে কিন্তু আমি শিল্পী হিসেবে তৃপ্তির জায়গাটা পেয়েছি।
কিন্তু একধরনের উষ্মাও প্রকাশ পাচ্ছে আপনার কথায়। তারপরও এই জেদ থেকেই বোধহয় ভালো কিছু কাজে সংশ্লিষ্ট হলেন। মেঘের কন্যা’র আগে ‘পেট কাটা ষ’। এছাড়া কলকাতায় একটা দারুণ মুভি’র কাজ শুরু করলেন। এ সম্পর্কে শুনতে চাই।
ঐ যে বললাম। একজন শিল্পীর ইচ্ছেশক্তিটা জরুরি। জীবনে যতগুলো ঝড় -ঝঞ্ঝার ভেতরে পড়েছি। আবারও তো উঠে দাঁড়িয়েছি ঠিকই। তাই ভালো কাজের প্রতি আকুলতা থাকলে অবশ্যই শিল্পীর কাছে তা ধরা দেবেই।
যত কাণ্ড কলকাতাতেই, আমার খরাজীবনে বৃষ্টির মতো। একেবারেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি। ব্যাপারটা এমন নয় যে এটার আভাস আমি আগে থেকেই পেয়েছিলাম। ভালো কাজের জন্য আমি সবসময় অপেক্ষা করি, এটা মনে হয় তারই পুরস্কার। দার্জিলিংয়ে প্রথম লটের কাজ শেষ করেছি। পুজোর পরে আবার শুরু হবে বাকি অংশের কাজ। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। অনীক দত্ত গুছিয়ে কাজ করেন। আমি আগে থেকেই নির্মাতার মতো করে কাজ করতে পছন্দ করি। বলা যায়, আমি পুরোপুরি ডিরেক্টরস আর্টিস্ট। আর কো-আর্টিস্ট হিসেবে আবীরও আমার খুব পছন্দের। আশা করি দারুণ কিছু একটা হবে।
তাহলে আবারও ব্যস্ত হলে কি মঞ্চ ছেড়ে দেবেন?
নাহ্। কারণ মঞ্চে কাজ করাটা অনেকটা টনিকের মতো। খুব কাজে দেয়। রেজা আরিফ স্যারের নির্দেশনায় নাটকের দল আরশিনগরের প্রযোজনায় ‘সিদ্ধার্থ’ নাটকের পাঁচটি শো করেছি। মঞ্চ আমার কাছে ভালোবাসার জায়গা। ভালোবাসা ছাড়া যায় না।