এ যেন ফুটবল উৎসবের মঞ্চ। উচ্ছ্বাস, শক্তি আর ফুটবল ভালোবাসায় বাংলাদেশের ফুটবলার, কোচ, কর্মকর্তাদের মাখামাখি। বসুন্ধরা কিংসের মাঠে বাংলাদেশের ফুটবলারদের চোখে আনন্দাশ্রু। প্লে অফ ম্যাচে মালদ্বীপকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল বিশ্বকাপের বাছাইয়ের আরেক ধাপ ওপরে উঠে গেছে। অস্ট্রেলিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। মালদ্বীপকে হারানো ম্যাচে জয়সূচক গোলদাতা ফয়সাল হোসেন ফাহিমের চোখে কান্না। জার্সি দিয়ে চোখ মুছছেন। এই ম্যাচ হেরে গেলে ২০২৭ পর্যন্ত ফিফার ম্যাচ পেত না বাংলাদেশ। সে কারণে কাল ছিল বাংলাদেশের ফুটবলের ভাগ্য পরীক্ষা।
সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী বছরটা ফিফার ম্যাচে ব্যস্ত থাকবে ফুটবল দল। সেই আনন্দে তারিক আজিজ, জামাল ভুঁইয়া, গোলরক্ষক মিতুল মার্মা, সোহেল রানা, সাদ উদ্দিন, বিশ্বনাথ, স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা, ম্যানেজার আমের খান, টিম স্টাফ মহসিন সবাই যেন আবেগাপ্লুত। ম্যাচের প্রথম গোলদাতা রাকিব হোসেন দেশের পতাকা নিয়ে গ্যালারির দিকে ছুটলেন। উচ্চস্বরে বাজছে মিউজিক। গ্যালারির হাজার হাজার দর্শক নাচছেন। ব্যান্ড বাজাচ্ছেন। মালদ্বীপকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল ভাগ্য উন্নয়ন করেছে— নির্ধারণী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
বসুন্ধরা কিংসের মাঠে ১১ মিনিটে রাকিব হোসেন এগিয়ে দেন বাংলাদেশকে। সাদ উদ্দিনের বাড়ানো বলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ঠেলে দেন রাকিবকে। গোলে পরিণত করেন রাকিব ১-০। প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ চার-পাঁচটি সুযোগ নষ্ট করেছে। একের পর এক সুযোগ নষ্ট আফসোসে পুড়িয়েছে স্টেডিয়াম ভরা দর্শকদের। ফাহিম এবং রাকিব যেভাবে গোলের সুযোগ মিস করেছেন তা ছিল অমার্জনীয়। আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ, বাংলাদেশের ফুটবল ভাগ্য যেখানে দাঁড়িয়েছে সেখানে রাকিব আর ফাহিম যেন গোল মিসের উত্সব করলেন। গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন রাকিব হোসেন।
গোলের পর তিনিই সবচেয়ে সহজ সুযোগ মিস করে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছেন। মালদ্বীপের গোলরক্ষক হুসেন শেরিফিকে ছোট বক্সের ভেতরে একা পেয়েও গোল করতে না পারা ছিল চরম ব্যর্থতা। ফুটবল দুনিয়ায় গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোল করতে না পারা খেলোয়াড়ের অভাব নেই। রাকিবের ব্যর্থতায় প্রশ্ন উঠছে কেন। কারণ রাকিব যে পজিশনে বল পেয়েছিলেন সেখান থেকে সময় নিয়েও গোল করার সুযোগ ছিল।
রাকিবের ধারেকাছে প্রতিপক্ষ মালদ্বীপের কোনো ফুটবলার ছিল না। মাথা ঠান্ডা করে গোলটা করতে পারতেন। অনভিজ্ঞ ফুটবলারের মতো গোল করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। গোলকিপার ঠেকিয়ে দিলেন। এভাবে একে একে কয়েক বার গোলের সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। ৩৫ মিনিটে সেই গোল শোধ করে দিল মালদ্বীপ। স্ট্রাইকার হামজা মোহম্মদের কর্নারের বল জটলায় দাঁড়িয়ে হেড করে গোল শোধ করেন আইসাম ইব্রাহিম। তার পরও জামাল, ফাহিম, রাকিবরা আক্রমণের সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু নিখুঁত শট ছিল না।
বাংলাদেশ দুর্দান্ত গোলটা এনে দিয়েছে বিরতির পরই। বিরতির শুরুতেই পুরো স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে দিয়েছে। প্রথম মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাদ উদ্দিন ক্রস করেন, মালদ্বীপের গোলরক্ষক ফিস্ট করলে বল সামনে পান রাকিব। তিনি জালে শট নিতে ব্যর্থ। বল পান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। বড় বক্সের ভেতরে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল করে এগিয়ে দেন ফাহিম, ২-১।
দুর্ভাগ্য হচ্ছে, ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ডাবল হলুদ কার্ডে লালকার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে দলকে বিপদে ফেলেন জুনিয়র সোহেল রানা। রক্ষণে ফাঁকা হয়ে যায়, ১০ জনের বাংলাদেশ। হাতে ৩১ মিনিট, ১০ জনের বাংলাদেশ। এর মধ্যেও গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। রাকিব বল তুলে দিয়েছিলেন, হেড হয়ে বল নিচে নামলে ফাহিম সেটা কানেক্ট করতে পারেননি। ৯০ মিনিটে লালকার্ড পেয়েছেন মালদ্বীপের আহনাফ রশিদ। শেষ যোগ হওয়া সময়ে মালদ্বীপ ১০ নিয়ে খেলে।