চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। চার দফায় এ পর্যন্ত ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়।খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সম্প্রতি ভারত থেকে প্রায় চার হাজার ৪৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু এ চাল আমদানির প্রভাব এখনো পড়েনি বাজারে। তবে আগামী সপ্তাহে দাম কমতে শুরু করবে বলে আশা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে চাল আমদানিকারকরা বলছেন, সরকার শুল্ক কমানোর পর ভারত চালের দাম বাড়িয়েছে।পাশাপাশি ডলারের মূল্যও বেড়ে গেছে। এ দুই কারণে আমদানি করা চাল বাজার পর্যন্ত আসতে যে খরচ হচ্ছে সেটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হওয়া চালের দামের চেয়েও বেশি। এ কারণে চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তাঁরা।
জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বৈদেশিক সংগ্রহ) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, চাল আমদানি শুরু হয়েছে।এখন পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ৪৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে।
রাজধানীর চালের অন্যতম পাইকারি বাজার হচ্ছে বাবুবাজার। এই বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.নিজাম উদ্দিন বলেন আমদানি করা চাল এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তবে আমদানি অব্যাহত থাকলে হয়তো আগামী সপ্তাহে চলে আসবে। যতটুকু জানতে পেরেছি, আমদানি করা চালে খরচ পড়ছে বেশি। আমদানীকৃত চালের দাম স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি থাকলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
চাল আমদানির অনুমতি পেয়ে ভারত থেকে ৫০০ টন মোটা চাল আমদানি করেছে মেসার্স কাজী সুবহান ট্রেডিং করপোরেশন।প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কাজী সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন আমরা প্রায় ৫০০ টন মোটা চাল ‘স্বর্ণা’ আমদানি করেছি। ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভারতে চালের দাম বাড়তি থাকায় চাল আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। স্বর্ণা চাল দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজি, সেই চাল ভারত থেকে আমদানি করতে আমাদের খরচ হয়েছে ৪৯ টাকা। প্রতি কেজিতে তিন টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে আমাদের।
কাজী সুজন বলেন, অনলাইনে ডলারের দাম দেখানো হচ্ছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা করে, কিন্তু ব্যাংকে পেমেন্ট দেওয়ার সময় প্রতি ডলার ১০১ টাকা দাম ধরা হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হলে ডলারের দাম কমাতে হবে এবং একই সঙ্গে আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে এভাবে চাল আমদানি করা সম্ভব না।
চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হেনা এন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল হাকিম মণ্ডল বলেন বর্তমানে ভারতে চালের যে দাম, ডলারের যে দাম ও সরকারের ডিউটি, সব খরচ মিলিয়ে আমরা হিসাব করে দেখেছি আমদানি করা চালের দাম দেশের স্থানীয় বাজারের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে। এ কারণেই আমরা আপাতত চাল আমদানি করার সাহস পাচ্ছি না।
চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইয়ান ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো.সুজন বলেন, ডলারের দাম ও ভারতে চালের দাম বাড়তি এবং কমানো হয়নি সম্পূর্ণ শুল্কও। এ অবস্থায় চাল আমদানি করা হলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমাদের। যার কারণে আপাতত চাল আমদানি করার চিন্তাও করছি না আমরা।
এদিকে দেশের বাজারে চাল আমদানির কী ধরনের প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে রাজধানীর সবচেয়ে বড় দুই চালের পাইকারি বাজার বাবুবাজার ও কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানীকৃত চালের প্রভাব এখনো এসব বাজারে পড়েনি।রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মো.সায়েম বলেন, কারওয়ান বাজারে এখনো আমদানি করা চাল আসেনি। শুনেছি অল্প পরিসরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চাল আমদানি করেছে। সেই চাল বাজারে আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। বাজারে আমদানি করা চাল না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না দাম বাড়াবে না কমবে। তিনি বলেন এখন বাজারে মোটা চাল স্বর্ণা কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, আটাশ ও পাইজাম চাল কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকন চাল মিনিকেট কেজি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা ও নাজিরশাইল কেজি ৭৬ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।