ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার জের ধরে ইউরোপে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা আবার নতুন মাত্রা পেয়েছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নিজস্ব নিরপেক্ষতার নীতি বিসর্জন দিয়ে সামরিক জোট ন্যাটোয় জোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও সুইডেনকে স্বাগত জানানোর প্রশ্নে তুরস্কের আপত্তি এতকাল ন্যাটোর জন্য অস্বস্তির কারণ ছিল।
গত বছরের মে মাসে দুই দেশই আবেদন পেশ করার পর ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ৩১তম সদস্য হিসেবে ফিনল্যান্ড ন্যাটোয় যোগ দিয়েছে। অবশেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সুইডেনের আবেদন সম্পর্কে আপত্তি তুলে নিয়ে সংসদে সেই সিদ্ধান্তের অনুমোদন চেয়েছেন। গত জুলাই মাসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনেই এর্দোয়ান সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে সংসদে অনুোমদের দিনক্ষণ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয় নি। ফলে সে বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে।
সুইডেনে আশ্রয় নেওয়া ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’গুলির সদস্যদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছিল তুরস্ক। বিশেষ করে তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত কুর্দি পিকেকে সংগঠনের সদস্যদের দমন করার ওপর জোর দিয়ে আসছিল সে দেশ। হাঙ্গেরির সরকারও নানা অজুহাত দেখিয়ে সুইডেনের জোগদানের সিদ্ধান্ত সংসদের অনুমোদন করাতে বিলম্ব ঘটিয়ে গেছে। তুরস্কের ছাড়পত্রের সিদ্ধান্তের ফলে সে দেশেও দ্রুত সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ তুরস্কের সংসদে দ্রুত ভোটগ্রহণের পর সুইডেনকে দ্রুত স্বাগত জানানোর আশা প্রকাশ করেন। তার আশা, আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা সম্ভব হবে। স্টলটেনবার্গ মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে সুইডেন যাচ্ছেন। মার্কিন প্রশাসনও তুরস্কের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত অনুমোদনের আশা প্রকাশ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তুরস্ককে ৩০টি নতুন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের ইঙ্গিত দিয়েছে। তাছাড়া সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রেও ওয়াশিংটন তুরস্ককে সাহায্য করতে পারে।
কুর্দি গোষ্ঠীর কার্যকলাপ দমনের ক্ষেত্রে সুইডেনের পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও সম্প্রতি সে দেশে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সুইডেনের সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পালটা পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করায় সম্ভবত তুরস্ক কড়া অবস্থান নিচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের জোগদানের প্রশ্নে সুইডেন সমর্থনের আশ্বাস দেওয়ায় এরদোয়ান সন্তুষ্ট হয়েছেন।